রাঙামাটির প্রত্যন্ত রাজস্থলী উপজেলার পর্যটনের সম্ভাবনাময় দশর্নীয় স্থান থাকলে সরকারী পৃষ্ঠাপোষকতা ও অবহেলার কারণে নিশ্চিহৃ হতে চলেছে। সম্ভাবনাময় এই পর্যটনের স্থানগুলো আকর্ষনীয় করা গেলে এই উপজেলায় প্রচুর দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমাগত ঘটতো।
জানা যায়, দার্জিলিং খ্যাত বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী রাজস্থলীর উপজেলার দশর্নীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ৩নম্বর বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের কাকড়াছড়ি রোডের ডান পার্শ্বে পাহাড়ের ঋষি মনিষী ধ্যানের স্থান। যা ঋষি ডং (ঋষি পাহাড়) নামে পরিচিত। সেখানকার অধিবাসী মারমা প্রবীন ব্যক্তিদের মতে, প্রায় কয়েকশত বছরের আগে এখানে এক ঋষি মনিষী ধ্যানের জন্য করতেন। স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়মিত পুজাঁ দিতো। তৎসময়ের লোকজনের বিপদ, অসুখ, বিসুখ, রোগ মুক্তির একমাত্র তিনি দেখভাল করতেন। মনিষী ঋষি চলে যাওয়ার পর এখন দর্শনীয় স্থান হিসেবে রয়েছে। এখনো বিভিন্ন লোকজন রোগ মুক্তির কামনার জন্য সেখানে গিয়ে পুজাঁ করে থাকেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস তারা ফলাফলও ভাল পাচ্ছেন।
গাইন্দ্যা ৫নম্বর ইসলামপুর বাজার এলাকা ক্যক-ব- ডং (পাথর খদিত ঝুড়ি) নামে একটি দশর্নীয় ঝিড়ি রয়েছে। ঝিড়ির মধ্যে পানি জমায়েত একটি কুপ রয়েছে। এই কুপে একটি অপুর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করা যায়। এই ঝিড়ি নিয়ে লোকমূখে গল্প রয়েছে। অভাব অনটনে থাকা ব্যক্তিরা কোথাও বড় ধরনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য পোষাক, সোনা, গয়নাসহ বিভিন্ন উপকরনের জন্য প্রার্থনা করে নিয়ে যেতে পারতেন। তবে নির্ধারিত সময়ে সেগুলো জমা দিতে হতো।
রাজস্থলীর আসা পথে আসমানী পাহাড় দৃশ্য বলবে, আপনি এক অজানা লোকালয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। উপজেলার সবচেয়ে কাছে টপহিল (পোয়াইতু পুর্নবাসন পাড়া) প্রায় নয় শত ফুট উচু পাহাড়টি রাজস্থলী উপজেলা চতুর দিকে সীমান্ত দৃশ্য দেখা মিলে। রুপের অপরুপ সৌন্দর্য্যরে জন্য সুটিং করতে আসতো বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলো। দিনের শেষে বসে দেখলে তিন কিলোমিটার আয়তনকে রাজস্থলী উপজেলাকে একটি গ্রামের চিত্র মনে হবে।
রাজস্থলী ছাং খিয়াং(হাতির নদী) আকাঁ, বাকা, উচু, নিচু নদীর পথে বেশ কয়েকটি ঝর্না রয়েছে। প্রায় শত ফুট উচু থেকে পড়ার পানির শব্দ প্রকৃতির এক মায়াবীর সুর। ঝর্নার পানির ¯্রােতে বাতাসের কম্পন গর্জে উঠার অনেক লতা, পাতা আপনাকে স্বাগতম জানাবে। চকচকের বালু মিশ্রিত পানি ছোট বড় পাথরগুলো দেখে একটু হলেও আপনার বসতে ইচ্ছা করবে।যেন মনে হবে অজানার কিছু কাহিনী অবশেষে দেখা মিলবে পাথর খদিত হাতি পরিবার যেন চেয়ে রয়েছে, মানুষ আর হাতি কখন পুজাঁ দিতে আসবে?
ঘিলাছড়ি ও গাইন্দ্যা ইউনিয়ন প্রথম উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাংলাদেশ সেনা বাহিনী উদ্যোগে নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলে মানুষ যাতায়াতের ব্রীজ দোলনার শৈশব কালের কথা মনে পড়বে। সাথে আপনার মনকেও দোলা দেবে। কাপ্তাই খালের পার্শ্বে গোখড়া সাপের গুহায়, সাপের রাজত্ব চিহ্ন বলে দেবে নাগ-নাগিনী সিনেমার কথা। তং.মং.হ্ন.মা (ভাই বোন ঝিড়ি) পাহাড়টি উপজেলার সবচেয়ে উচু পাহাড়। সেখানে দাড়িয়ে দেখলে মিলবে রুপের বৈচিত্র্য পাহাড়ের অপরুপ দৃশ্য। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেন নজর কেড়ে নেবে। জোনাকির ঝিলিমিলি বিনোদনের আসর। বিলাইছড়ি ফারুয়া বাজার আর হ্রদের পানি বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা স্থান ক্ষনিকের জন্য মনের শান্তনা করে দিতে পারে। চারদিকে তাকালে প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে কিছু বলার ও লেখার অভিনন্দন জানাবে।
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অধ্যুষিত স্থান বলি পাড়া। এটি বলি পাড়া নামে খ্যাতি রয়েছে। এখনো ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একজন শারীরিক শক্তিধর রয়েছে। তবলা ¤্রং (সিন্দুক ঝিড়ি) পাথরে খদিত একটি সিন্দুক রয়েছে। সেখানে নানা রকমের ধন, দোলক, মূল্যবান সম্পদ রয়েছে বলে এখানকার মানুষের বিশ্বাস। ফাল্গুন-চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমে এ ঝিড়িতে ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে। আরো রয়েছে সোনা মাছে জোড়া কুপ, পাথরের খদিত কুমির, বম মেয়ে ধান ভাঙ্গানোর ঢেকি ইত্যাদি।
আওয়ামী লীগ উপজেলা সভাপতি উবাচ মারমা বলেন, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন মোটা অংকের অর্থ। বিএনপি উপজেলা সহ-সভাপতি ৩৩৩নম্বর ঘিলাছড়ি মৌজা হেডম্যান দীপময় তালুকদার বলেন, তং. মং হ্ন মা পাহাড় (জান্দিমইন) মধ্যে খানে অনেক তংঞ্চগ্যা বসতি রয়েছে। পর্যটন গড়ে তুলতে পারলে আর্থিকভাবে উপজেলাটি অতি লাভবান হতে পারতো।
উপজেলা চেয়ারম্যান উথিনসিন মারমা বলেন, কোন পর্যটন করর্পোরেশন প্রতিষ্ঠান বা পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন যদি এগিয়ে আসে এসব স্থান পর্যটন কেন্দ্র দ্রুত গড়ে উঠা সম্ভব। এতে উন্নয়ন হবে এলাকার সর্বস্তরে জনগনের।
তার মতে, তিন পার্বত্য জেলার ২৫টি উপজেলা মধ্যে সবচেয়ে শান্তি প্রিয় এই উপজেলাটি। যা পাহাড়ী-বাঙ্গালী শান্তি, সম্প্রীতি উন্নয়ন এখনো অক্ষুন্ন রয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.