রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় আমন ও আউশে বন্যার বড় ধাক্কা লেগেছে। এবার সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার জুরাছড়ি, মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নের কৃষকরা। তাঁদের কোথাও ফসলসহ জমি ডুবে গেছে। আবার কোথাও কর্তনকৃত ফসল জমি নদীরগর্ভে বিলীন হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এদিকে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় দাবী করেছে উপজেলার চার ইউনিয়নের মধ্যে জুরাছড়ি, মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে তাৎক্ষনিক ভাবে ৭-৮ হেক্টর ক্ষয়-ক্ষতির ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকরা জানান,উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলাংছড়ি, চুমোচুমি, সামিরা, ঘিলাতলী, শীলছড়ি এলাকা ও মৈদং ইউনিয়নে বারাবান্য, মন্দিরাছড়া, জামেরছড়ি, তালুকদার পাড়া, নলবনিয়া, পানছড়ি মূখ, হাজাছড়ি, উবুকছড়ি, তিন টিলা, মরল্যাছড়া, ফকিরাছড়া এবং দুমদুম্যা ইউনিয়নের বস্তিপাড়া, বরকলক, তারাবনিয়া গ্রামের ধান্য জমি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ী ঘোনা ও ছড়ার দু,পাশের জমির ক্ষতির পরিমাণ বেশী। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দেড় হাজার প্রায়।
শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে জানা যায়, গেল ১১ ও ১২ অক্টোবর অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ী ঢল মানতে শুরু করে। কৃষকরা বুঝে উঠার আগেই মহুর্তে পাহাড়ী ঢলে ধান্য ফসল নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
জামেরছড়ি গ্রামের ফুলমূখি চাকমা (৫০) জানান, পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। তিন সন্তান নিয়ে ৪ বিঘা জমি চাষাবাদ করে করে কোন রকমে সবার বোরন পৌষন হয়। এবার তাও অতি বৃষ্টির কারণে মহুর্তে পাহাড়ী ঢলে সব ফসল তলিয়ে গেছে। এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
ফকিরাছড়ির গুরিকা চাকমা, বস্তিপাড়ার ভাগ্য রাম চাকমা, বারাবান্যর মেন্দা চাকমা জানান, বিগত ১৩ জুন নদীতে বাড়ীঘর চলে গেছে। এবার বহু দের-দেনা করে আমান চাষাবাদ করেছি। ফসলও ভালো হয়েছিল। অতিবৃষ্টি, ঝোড়ো বাতাস এবং এরপরই শুরু হয়পানি বৃদ্ধি। মহূর্তে ধান্য জমিগুলো পানিতে ডুবে যায়। এখন পানি কিছুটা কমে গেলেও গাছগুলো মরে যাচ্ছে। চিন্তা করছি, অভাবের সংসারে কী ভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেব।
মৈদং ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত সদস্য স্বপ্না চাকমা জানান, বহু আশা ভরসা নিয়ে তামাক চাষ বন্ধ করে এ বছর আমান চাষ করেছে কৃষকরা। ফসলও ভাল হয়েছে। দুর্ভাগ্য বশতঃ অতিবৃষ্টির কারণে রাতের মহুর্তে ইউনিয়নের ৮০ভাগ ফসল পানিতে তলিয়ে যায়।
জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা জানান, সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারণে বোরো চাষীদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতে আমনে চাষীরা আবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরেছে। চাষাবাদের অধিকাংশ কর্তন ও পাকা, আধা পাকা শতাধিক একর ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এখন কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী শফিকুল ইসলাম মুঠো ফোনে জানান, চলতি মৌসুমে ২শত ৪৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। তার মধ্যে বিগত অতিবৃষ্টিতে তাৎক্ষনিক ভাবে সাত-আট হেক্টর ক্ষয়-ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। সঠিক ভাবে নিরুপনের জন্য ইতিমধ্যে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান,যতটুকু সম্ভব সরজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা পাটানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা জানান, মৌসুমের চাষাবাদের ৯০ ভাগ ধান্য জমির ফসল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.