রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় পাহাড়িদের গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা তদন্তে আইন অনুসারে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতির নিরূপণ কমিশন কেন করবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
সোমবার এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে আট সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। কমিশন বিষয়ে অগ্রগতি আগামী তিন মাসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে আগামী ৩ নভেম্বর পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।
লংগদুর ঘটনায় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গেল বৃহস্পতিবার লংগদুর বাসিন্দা, ক্ষতিগ্রস্ত, আইনজীবীসহ নয় জন্ এই রিট আবেদনটি করেন। সোমবার এটি শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। সাথে ছিলেন আইনজীবী মো. সুলতান উদ্দিন ও এম মনজুর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
জানা যায়, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসতিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ওই ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গেল ১২ জুন চার সচিব ও পুলিশ প্রধানকে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিকোলাস চাকমা। পরে ওই নোটিশের জবাব না পাওয়ায় গেল ১৭ আগষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দা, আইনজীবীসহ মোট নয়জন জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করা হয়।
উল্লেখ্য, গেল ১ জুন দিঘীনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের খাগড়াছড়ি সদর থানার চার মাইল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ পাওয়া যায়। পর দিন ২ জুন লংগদুতে বাত্যা পাড়ায় নয়নের লাশ নেয়ার পর স্থানীয় বাঙালীরা লাশ নিয়ে উপজেলা সদরে মিছিলি করার সময় তিনটিলা, বাত্যাপাড়া ও মানিকজোড় ছড়ায় পাহাড়ীদের বসতবাড়ীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে ২১২টি বসত বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এসময় অগ্নিসংযোগকারীরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়া গুণমালা(৭৫) নামের এক বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। পাহাড়ীরা প্রাণের ভয়ে এক কাপড়ে নিরাপদ আশ্রয় স্থানে পালিয়ে যায়।
এদিকে, সরকার নিরাপদ স্থানে পালিয়ে থাকা এসব পাহাড়ীদের ত্রাণ সহায়তা ও তাদেরকে বসত ভিটায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও সরকার ব্যর্থ হয়। পাহাড়ীরা নিরাপত্তাহীনতার অভাবে নিজেদের বসতভিটায় ফিরে আসতে আস্বীকৃতি এবং ঘটনার প্রতিবাদে সরকারী ত্রাণ সহায়তা বর্জন করে।
এ ঘটনার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রীর মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দলের একটি কমিটি এবং মন্ত্রী পরিষদের গঠিত অপর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উচ্চ পর্যায়ের এ দুটি কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরনের উপযুক্ত আশ্বাস না পাওয়ায় বসত ভিটায় ফিরতে অস্বীকৃতি জানায় পাহাড়ীরা। পরবর্তীতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গেল ১২ জুলাই সরকারী ত্রাণ সহায়তা নেন পাহাড়ীরা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.