বান্দরবানের লামা উপজেলায় বিগত বছরের ন্যায় এবারও আদালতের রায় উপেক্ষা করে প্রায় ১৩ হাজার একর ফসলের জমিতে তামাক চাষের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন টোবাকো কোম্পানীর লোকজন। উপজেলায় তামাক চাষী নির্বাচন করে প্রাথমিক কার্যক্রমের ঋণ ও বীজসহ বিভিন্ন উৎপাদনের সরঞ্জাম দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদিত এই ফসলি জমি দখলে নিয়েছে বিভিন্ন মরণ ব্যাধিসহ ক্যান্সারের প্রধান কারণ এই তামাক চাষ কাা হচ্ছে। তামাক চাষে সরকারের বিধি নিষেধ থাকলেও লামা উপজেলা প্রশাসন বরাবরই “ঢাল আছে তলোয়ারনেই নিধিরাম সরকারের” ভূমিকা নিয়ে থাকে প্রতিবারেই।
বান্দরবানের পার্বত্য জেলার লামা উপজেলায় ১৯৯১ সাল থেকে তামাক চাষ হয়ে আসছে। তবে ২০১১ সালে জেলা চাষী স্বার্থরক্ষা কমিটির তামাক চাষ বন্ধ ও ন্যায্য দাম পাওয়ার দাবীতে আন্দোলন করলে এক পর্যায়ে বান্দরবান জর্জ কোর্টে আদালতে তামাক চাষের বৈধতা নিয়ে আদালতে একটি রিট করা হয়। বিজ্ঞ আদালত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রনে রাখতে লামা উপজেলার সব তামাক কোম্পানিগুলোকে সর্বমোট ১ হাজার একর তামাক চাষের অনুমতি দেয়। কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। সমগ্র উপজেলা ঘুরে দেখা যায় এক, দুই ও তিন ফসলি জমিসহ সরকারী রিজার্ভ, নদীর দু’পার তামাক চাষের দখলে রয়েছে। সরকার কর্তৃক অত্র উপজেলাকে পর্যটন জোন ঘোষনা করা হলেও তামাক জোন বললে কোন অংশে ভূল হবে না।
সূত্র আরও জানায়, আসন্ন মৌসুমে তামাক কোম্পানি গুলো সর্বমোট ১৩ হাজার ৩ শত একর জমিতে তামাক চাষ করতে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। ইতিমধ্যে চাষীর তালিকা তৈরি, তামাক বীজ ও পলিথিন সরবরাহ, বীজতলা তৈরি এবং জমি নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন নামকরা তামাক কোম্পানীগুলো ৩ হাজার একর, ৪ হাজার ৫ শত একর, ২ হাজার ৫ শত একর, ৩ শত একর, সমিতি ট্যোবাকো ১ শত, ৩ শত একর ও ব্যক্তি মারিকানাধীন ২ হাজার ৬ শত একর জমিতে তামাক চাষের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তামাক সম্পর্কিত তথ্য চাইতে গেলে এসব কোম্পানীর দায়িত্বরত ব্যক্তিরা নানান অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান ও তথ্য গোপন করে থাকেন। অতি শীঘ্রই তামাকের এ আগ্রাসন বন্ধ করা না গেলে সরকারের জলবায়ু ইস্যু ভেস্তে যেতে পারে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের লোকজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সরকারী এক কর্মকর্তার নামীয় জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন লোক দেখানো বিরোধীতা করলেও তাদের অব্যবস্থাপনা এবং অবহেলার কারণে চাষীরা তামাক চাষের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বেপরোয়া তামাক চাষের ফলে পরিবেশ ও সমাজের নানা ক্ষতি, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও নেশাগ্রস্থতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এতে যুব সমাজ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার বদলে নেশায় মত্ত হয়ে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হয়ে উঠছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে সরকারি জমি, নদীর দু’পাড় ও বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকায় তামাক চাষ আবাদে করা হচ্ছে। বর্তমানে লামা উপজেলায় ৫ হাজার ৫ শত জন চাষী তামাক চাষে জড়িত বলে জানা গেছে।
লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রুস্তম আলী জানান,যেভাবে তামাক চাষের আবাদ বাড়ছে তা যথারীতি অত্র জনপদের জন্য হুমকি স্বরুপ। ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে সরকার কর্তৃক স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ, কৃষি উপকরণ সহজলভ্যসহ নানান পদক্ষেপ সরকার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষি পন্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও জনসচেতনতাই পারে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে। তাছাড়া কোম্পানীগুলো তামাকের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্য গোপনসহ জবাবদিহিতা করতে অনিহা প্রকাশ করে। সরকারী সঠিক নির্দেশনা পেলে তামাক কোম্পানীদের নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ জানান, বান্দরবান জর্জ আদালত তামাক চাষে লামা উপজেলায় যে পরিমান জমি নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারী আদেশ অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া তামাক চাষ নিয়ন্ত্রনে প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিক।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.