খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় সাওতাল পাড়ায় এবার হয়নি কোনো পানবাহা উৎসব। এমকি তাদের ভাগ্যে জুটেনি ১লা বৈশাখের পান্তা ইলিশও।
পাহাড়ের প্রানের উৎসব ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইং ও চাকমাদের বিজু’র ত্রি আদ্যক্ষরে মিলিত বৈসাবিকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা আনন্দ উৎসব মেতে উঠলেও খাগড়াছড়িতে একমাত্র বসবাসরত সাওতাল পরিবারের এবার হয়নি প্রধান সামাজিক উৎসব পানবাহা। এ আদিবাসী সাওতালরা দারিদ্রতা সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কোনো খোজ-খবর নেয়নি। তাইতো যে সময়ে সাওতালরা তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব পানবাহা করার কথা অথচ উৎসবের নেই কোন আমেজ ও নেই কোন আয়োজন। শুধু তাই নয়, বাংলা বর্ষবরণ উৎসবেও বসবাসরত এসব সাওতাল পরিবারের ভাগ্যে জুটেনি পান্তা ইলিশ । সাওতাল পাড়া দারিদ্রতার সাথে যেন দীর্ঘ বছরের যুদ্ধের চিত্রের ইতিহাস বহন করছে । নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থায়ও গত বছর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান হলেও এ বছর পানবাহা উৎসব করতে পারেনি সাওতালরা । দারিদ্রতার করাল গ্রাসে হুমকির মুখে আজ তাদের জীবন । এ উপজেলায় ’সাওতাল’ জনগোষ্ঠীর জীবন যেন বিপন্ন হওয়ার পথে।
কাপ্তাই বাধের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এসব সাওতাল পরিবার খাগড়াছড়ি পানছড়ির বড় সাওতাল পাড়া, মঙ্গল কার্বারী পাড়া ও রামদাস কার্বারী পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল ষাটের দশকে । এখন তাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই। অনেকটা উদ্ধাস্তুর মতো তাদের যাপিত জাীবনের চিত্র অমানবিক ও অবর্ণনীয়। পাহাড়ে বর্ষবরণ ও বৈসাবি উৎসব ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়লেও ব্যতিক্রম শুধু সাওতালদের গ্রামে। অথচ এখন তাদের ’পানবাহা’ উৎসবের সময় । বাংলা নববর্ষের দিন শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে বাহামি, পাতা ও ছাতা নামে তিনদিন ধরে প্রথাগত এই উৎসব উদযাপন করার কথা ।
পানছড়ির সাওতাল পাড়াবাসী অনেকেই আক্ষেপ করে জানান, নিজেদের বৈধ জমি নেই, তাই অন্যের বাড়ীতে শ্রম দিলে এক মুঠো ভাত মেলে। অন্যথায় পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারী-বেসরকারী ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও সাওতাল জনগোষ্ঠীর জন্য ছিটেফোটাও আর্থিক সাহায্য জোটে না। ফলে সময়ের সংগে সংগে অন্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও ঘুরেনি সাওতালদের কপাল ।
পানছড়ি সাওতাল পাড়ার কার্বারী পাড়ার সম মাদ্রি ও রামদাস সরেনসহ অন্যান্যরা জানান,তাদের অভাব-অভিযোগের কথা কখনো কেউই শুনতে আসেননি। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ধর্মীয় রীতিগুলোই শুধু পালন করছেন। পানবাহা উৎসব প্রতিকী পর্যন্তও করতে পারেননি তারা ।
সাওতাল পাড়া যুব কমিটি’র সাধারন সম্পাদক সুজন সাওতাল জানান, অভাবের কারনে পানবাহা উৎসব এবার করতে পারেননি। তবে ঘরোয়াভাবে ধর্মীয় রীতি-আচার-প্রথা পালন করা হয়েছে । কিন্তু ইচ্ছা থাকার স্বত্বেও অভাবের তাড়নাই এবার পানবাহা উৎসব আয়োজন নেই ।
বয়োবৃদ্ধ দেনা মুরমু সাওতাল জানান, পানছড়ি সাওতাল পল্লীতে বর্তমানে শতাধিক পরিবার বাসবাস রয়েছে। পাড়ার প্রধান তিন কার্বারী দায়িত্ব রয়েছেন। যারা সামাজিক সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন । তিনি আরও জানান, অনেকে বাংগালী ও অন্য সম্প্রদায়ের সংগে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন । ফলে সাওতালদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে ।
সাওতাল পরিবারগুলোর অভাব-অভিযোগের কথা স্বীকার করে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা বলেন, এবার সাওতাল পরিবাররা পানবাহা উৎসব করতে পারেননি। তেমন অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় উপজেলা পরিষদ থেকেও তাদের জন্য সহায়তা করার মতো সামর্থও তার ছিল না।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.