খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে নতুন মুখের সমাগমের পাশাপাশি পদোন্নতিতেও তরুণরাই প্রাধান্য পেয়েছে। তিনটি প্রভাবশালী পরিবারের একাধিক ব্যক্তি পদ-পদবী যেমন পেয়েছেন তেমনি আওয়ামীলীগের মিটিং মিছিলে না থাকা মানুষেরও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে প্রস্তাবিত এই কমিটিতে।
দীর্ঘ সাত বছর পর গত বছরের ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনের তিন মাসের মাথায় বুধবার কেন্দ্রে জমা দেয়া প্রস্তাবিত কমিটি পুর্নগঠন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত দায়িত্বশীল সূত্র উপর্যুক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন। সেই সম্মেলনে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য দ্বিতীয় বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় সভাপতি এবং আলোচনার ভিত্তিতে নির্মলেন্দু চৌধুরীকে সা: সম্পাদক এবং সা: সম্পাদক পদ প্রত্যাশী মো: দিদারুল আলমকে প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ঘোষণা করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, ৭৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে চমক হিসেবে সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন পৌর মেয়র মো: রফিকুল আলম। তিনি প্রস্তাবিত কমিটির উপদেষ্টা ও দীর্ঘ সময় জেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক থাকা জাহেদুল আলম ও নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলমের সহোদর।
জানা গেছে, বিগত পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে তিক্ততার সূত্র ধরে মেয়র রফিককে কমিটি রাখা-না রাখার বিষয়ে দোদুল্যমানতা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের শীর্ষ দুই নেতা ও মন্ত্রীর নির্দেশনায় তাঁকে নির্বাহী সদস্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন মুখ হিশেবে এই কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র বড় ছেলে ভারতেশ্বর ত্রিপুরা ও ঢাকার ‘আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইউবি)’-এর শিক্ষক বরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, জেলা আওয়ামীলীগে অভিষেকেই পেয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। তাঁর পিতা বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা, বরাবরের মতো এই কমিটিতে প্রথম সহ-সভাপতি রয়েছেন।
জেলা আওয়ামীলীগে দ্বিতীয় নারী হিশেবে যুথিকা চাকমা যুক্ত হলেও সংরক্ষিত নারী এমপি বাসন্তী চাকমা’র নাম তালিকায় নেই বলে জানা গেছে।
উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রস্তাবিত জেলা কমিটির শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক পদে অধ্যাপক নীলোৎপল খীসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, বন ও পরিবেশ সম্পাদক পদে শওকত উল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক পদে চন্দন দে এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক পদে সাংবাদিক নুরুল আজমের নাম জানা গেছে।
সদস্য পদে দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো: কাশেম, সাবেক এমপি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র একমাত্র সন্তান অপূর্ব ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত দোস্ত মোহাম্মদ চৌধুরী’র সন্তান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, জেলা যুবলীগ সভাপতি যতন ত্রিপুরা, মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র মো: শামসুল হক, পানছড়ি উপজেলার সাবেক সম্পাদক সাংবাদিক জয়নাথ দেব, সাবেক সভাপতি বাহার মিয়া, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: শানে আলম, যুবলীগ নেতা কৈলাস ত্রিপুরা এবং কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এড. নুরুল্লাহ হিরো অন্যতম।
পুরনো কমিটি থেকে এবারের কমিটিতে পদোন্নতি পেয়েছেন সহ-সভাপতি পদে তপন কান্তি দে, যুগ্ম-সা: সম্পাদক পদে এম. এ. জব্বার, এড. আশুতোষ চাকমা, সাবেক ছাত্রনেতা মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামীলীগে থাকার এবার একটি সম্পাদকীয় পদ পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা শিবু শংকর দেব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র সা: সম্পাদক জুয়েল চাকমা। সাংগঠনিক পদে মানিকছড়ির শফিকুর রহমান ফারুক ও পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, উপ-প্রচার সম্পাদক পদে রামগড়ের কাজী মিন্টু অন্যতম।
অপরিবর্তিত থাকাদের মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস. অনন্ত ত্রিপুরা’র নামটি নিশ্চিত করেছে সূত্র। এছাড়া ১৫ জনের উপদেষ্টা পরিষদ এবং ১৩টি সহ-সভাপতি পদে খুব একটা রদ-বদল হয়নি বলে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত কমিটির সা: সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, সব পক্ষ-সব সম্প্রদায়, নবীন-প্রবীন এবং সাংগঠনিক ত্যা-তিতিক্ষা বিচার বিশ্লেষণ করেই প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। জেলা সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দলের সিনিয়রদের সাথে আলাপ করেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কমিটি অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রের এখতিয়ার।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.