ভৌগলিক-নিসর্গ আর জন বৈচিত্র্যের জনপদ খাগড়াছড়িতে খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে পর্যটন সম্ভাবনা। গেল এক দশকে পাহাড়ের ভূ-স্বর্গ খ্যাত ‘সাজেক’-কে ঘিরে খাগড়াছড়ি শহরে আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট আর পরিবহন খাতে বেড়েছে বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগ। তবে এতোকিছুর পরও শূন্যতা ছিলো বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্রের। এবার সেই ঘাটতি পূরণে এবং জেলার উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে মাঠে নেমেছেন, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নিজেই।
আলুটিলায় তাঁর নিজ মালিকানার ১০ একর পাহাড়ি টিলাভূমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন সর্বোচ্চ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পর্যটন কেন্দ্র ‘খাস্রাং রিসোর্ট’। ত্রিপুরা জাতিসত্তার ভাষার ‘খাস্রাং-এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো মনের প্রশান্তি। আলুটিলা পর্যটন-রহস্যময় গুহা এবং তেরাংতৈবাকলাই (রিছাং ঝরণা) সংলগ্ন খাস্রাং রিসোর্ট অবস্থানগত কারণে মাত্র একমাসের মধ্যেই লাভ করেছে বিপুল জনপ্রিয়তা।
সরেজমিনে জেলা শহরের অনতিদূরে সুউচ্চ আলুটিলা পাহাড় চূড়ার ‘খাস্রাং’-এ গেলে চোখে পড়বে নির্মল মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। এর মাঝে গড়ে উঠা এই বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। নানা রঙের বাহারি ফুল-পাতা আর পরিকল্পিত আলোকায়ন আর নান্দনিক কটেজ। পূর্ব-উত্তর দিকে চোখের সীমানায় দেখা যাবে পুরো খাগড়াছড়ি সর্পিল চেঙ্গী পাড়ের খাগড়াছড়ি শহর। অনেকটা পাখির চোখে দেখার মতো হয়ে সন্ধ্যায় মনে হবে এ এক নয়া দার্জিলিং। আর পশ্চিমে যতদূর চোখ যাবে, চোখের সীমানাজুড়ে পাহাড় আর পাহাড়। সন্ধ্যায় দেখতে পাবেন ভারতীয় সীমান্তের উচ্চ আলোর হেলোজেন বাতির মিছিল। যা সত্যিই ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য অন্য এক প্রশান্তির জায়গা। পাহাড়ের বুক চিড়ে রয়েছে পাথর এবং সবুজ পাহাড়ের গাছ-গাছালিতে পাখির কল -কাকলি।
খাস্রাং বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা সহকারি সাংবাদিক লিটন ভট্টাচার্য্য রানা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা তার ১০ একর জায়গার ওপর ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠায় গড়ে তুলেছেন খাস্রাং রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে অসংখ্য সুদৃশ্য কটেজ প্রতিটিতে গড়ে ৮/১০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আছে একটি হলরুম, যেখানে ১০০ জনের সভা-সেমিনার ও অনুষ্ঠান করা যাবে। রিসোর্টে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক রাখা হয়েছে যেখানে পর্যটকরা ভাড়ায় এগুলো পরে ছবি তোলার পাশাপাশি পাহাড়ি জনজীবনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। পর্যটকদের রাতে থাকার জন্য তৈরি হচ্ছে একটি হোটেল।
খাস্রাং-এর আরেক সহকারি জেসমিন ত্রিপুরা কার্ত্তিক জানান, তাঁদের বিনোদন কেন্দ্রটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। ফলে প্রতিদিনই কয়েক’শ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে। আর পিকনিক পার্টিও পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ‘গেট টুগেদার’ তো লেগেই আছে। ক্রেতার আগ্রহের কারণে এক মাসের মধ্যেই বাড়তি লোকবলের প্রয়োজন পড়েছে। যদিও খাস্রাং-এ শুরু থেকেই পাঁচজন লোকবল সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, আলুটিলায় সরকারীভাবে শীঘ্রই কেবল কার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। একারণে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আরো নতুন নতুন রিসোর্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়ির রিচাং ঝর্ণা, মাইয়ুংকপাল পাহাড়, ও ভাইবোন ছড়ার মায়াবিনী লেকটিকে ঘিরেও উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশ বেড়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, বেসরকারী উদ্যোগে স্থাপিত খাস্রাং জেলার সম্ভাবনাময় পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো। পর্যটকদের জন্য এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। যেকোন সমস্যায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সহ-সভাপতি ও দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো: কাশেম বলেন, পর্যটন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে এখানকার উদ্যোক্তাদের মধ্যে দীর্ঘসময় একটা সংশয় ছিলো। বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী প্রত্যাশিত ভোক্তা পাওয়া- না পাওয়ার দোদুল্যমানতা ছিলো। কিন্তু সংসদ সদস্যের দেখানো পথ ধরে এখন জেলায় পর্যটন খাতে বিনিয়োগের একটা চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘খাস্রাং’ ভবিষ্যতে শিশুদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, যেহেতু এখানে সোনামনিদের বিনোদনের জন্য শিশুবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তাছাড়া শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি পাবে পাহাড় চূড়ায় সৃজিত সুইমিং পুলে সাঁতার শেখার সুযোগ।
সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এই প্রতিনিধিকে বলেছেন, ‘পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্পটের পাশাপাশি খাস্রাং রিসোর্ট আলাদা মাত্রা যোগ করবে এবং পর্যটন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
---হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.