মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে লাখো পূর্ণার্থীর শ্রদ্ধা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যের ও সাধু সাধু ধ্বনিতে মধ্য দিয়ে শুক্রবার রাঙামাটি রাজবন বিহারে চীবর দানোৎসব শেষ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দুইদিন ব্যাপী সর্ববৃহৎ ৪৬তম কঠিন চীবর ধর্মীয় উৎসবে সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে রাজবন বিহার।
রাঙামাটি রাজ বন বিহার মাঠে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনকারী পূর্নার্থীদের উদ্দেশ্য স্বধর্ম দেশনা দেন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, পানছড়ি বন বিহারের অধ্যক্ষ সাধনা রক্ষিত মহাস্থবির প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত আসনের সাংসদ বাসন্তি চাকমা, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন রাঙামাটি রাজ বন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান। এসময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইনুর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এক এম মামুনুর রশিদ, চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন, জেলা পরিষদ সদস্য অংশ্রুপ্রু চৌধুরী, সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শুরুতে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়। এরপর ভিক্ষু-সংঘের উদ্দেশ্য চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় পঞ্চলশীল প্রার্থনা করেন। এতে পঞ্চশীল, অষ্টশীল ,বৌদ্ধ মূর্তি ও কঠিন চীবর উৎস্বর্গের পর মহাপূর্নবর্তী বিশাখা প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকৃত কঠিন চীবর চাকমা রাজা রাজ বন বিহারের প্রধানের উদ্দেশ্য প্রদান করেন। এর আগে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকৃত কঠিন চীবর ও মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত রাজ বন বিহারের অধ্যক্ষ সাধনানন্দ মহাস্থবির(বন ভান্তে) প্রতিমূর্তি মঞ্চে নিয়ে প্রধান আসনে বসানো হয়। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও কয়েকটি দেশের বৌদ্ধ পূর্নার্থীসহ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। গত বৃহস্পতিবার চরকায় সুতা কেটে চীবর প্রস্তুতের কাজ সুচনা করা হয়। রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে অর্ধশতাধিক চরকা ও প্রায় ২শতাধিক বেইন স্থাপন করা হয়। প্রায় ৬ শতাধিক মহিলা এই চীবর প্রস্তুত কাজে অংশ গ্রহণ নেন।
সবাইকে মৈত্রীময় ভাবনা নিয়ে শান্তিপূর্নভাবে বসবাস করার আহ্বান জানিয়ে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, প্রতি বছর বিদেশ থেকে অনেক পূর্নার্থী এই কঠিন চীবর দানোৎসবে যোগদান করলেও এ বছর অনেক বিদেশী পুর্নার্থী আসতে পারেননি। তাই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও সৎ জীবন নিয়ে জীবনযাপন করার হিতোপদেশ দেন। তিনি বলেন, সততা, কর্ম কৌশল বৃদ্ধি করতে পারলে অধিকার আদায় করা সম্ভব এবং এ কৌশল কর্মের প্রভাবে দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করার সম্ভব।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করণসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলেই একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.