রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চল উপজেলা রাজস্থলী। এ উপজেলায় কয়েক যুগ ধরে বিদ্যুৎ সম্প্রসারিত হলেও বিদ্যুতের আলো নেই প্রায় শতাধিক গ্রামে। সরকার বদলাচ্ছে, আর দল ক্ষমতাও পরিবর্তন হয়েছে, দেশ উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুত গতিতে। তারপরও এসব এলাকার মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আশির দর্শকের পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ আমলে উপজেলা গঠনের পর ১৯৮৪ সালে রাজস্থলী উপজেলা বিদ্যুৎ সম্প্রারণ করেন। ওই সময়ের বিদ্যুৎ যতটুকু সম্প্রারণ করা হয়েছে। এরপর আর খুব বেশি সম্প্রারণ কাজ এগোতে পারেনি। বিগত ৩৪ বছরের দেখা গেছে, ৩ নম্বর বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের স্যাটালার জোন ও প্রায় পাহাড়ী গ্রামে বিদ্যুৎ সম্প্রারণ করা হয়েছে। এদিকে রাজস্থলী উপজেলা সদরের তালুকদার পাড়া, হাজী পাড়া ও রাজস্থলী কলেজ পর্যন্ত সম্প্রারণ করেছে।। তবে, বিদ্যুৎ সম্প্রারণের সহজে সম্ভব গ্রাম ও বিদ্যুৎ নেই গ্রাম শতাধিক।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতিক বাঙ্গালহালিয়া সংলগ্ন বান্দরবান সড়কের পাশের্^ বিদ্যুৎ সাব কেন্দ্র স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। উন্নয়ন দিগন্ত একধাপ পেল রাজস্থলী উপজেলা। যে সমন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সম্প্রসারিত হয়েছে। সেখানে সবাই আলোকিত ডিজিটাল জীবন যাপন করছে। তথ্য প্রযুক্তি যুগ একটু হলেও তাদের উম্মোচন শুরু হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ১নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের গ্রামের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৬০টি । কিন্তু বিদ্যুৎ সম্প্রসারিত গ্রামের মাত্র ১০টি। তার মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ আমলে সম্প্রারিত রয়েছে ৮টি গ্রাম। বাকী ৫০টির গ্রাম কবে, কখন, কিভাবে বিদ্যুৎ আসবে কেউ জানেনা। আদৌ বিদ্যুৎ আসবে ? কিনা আসেব না, কোন উত্তর নেই। উত্তর হচ্ছে, ১নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১নম্বর ওর্য়াডে সাবেক ইউপি সদস্য সাদুরাম ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যুৎ জঙ্গলে যায় না। আর জঙ্গলের মানুষেরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে জানেনা। অথচ তিনি (সাদুরা ত্রিপুরা) কাপ্তাই নদীর যেখানে শুরু সেখানে তার বাড়ি। কাপ্তাই লেকের বাধেঁর বিদ্যুতের তার এখনো জানা নেই।
১নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুশান্ত প্রসাদ তংচংগ্যা জানান, এ ইউনিয়নের ঐতিয্যবাহী রুপরেখা রয়েছে নানা রকম। যোগাযোগ, বিদ্যুতায়ন ও প্রযুক্তি প্রসার হলে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, ক্ষেত ফসলের আয় বৃদ্ধি, দ্রুত শিক্ষা হার ও জীবন যাত্রা অমুল পরিবর্তন সম্ভাব। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সোলার বিতরণ করলেও তা সবার জন্য সম্ভব হচ্ছে না।
২নম্বর গাইন্দ্যা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম রয়েছে। বিদ্যুতের আওতায় গ্রামের সংখ্যা ৭টি। বাকী ৪৩টি গ্রামের জনগন রয়েছে বিদ্যুতের অপেক্ষায়। কারণ বাড়ী চালের উপরের ৩৩ হাজার ভোল্টের খাম্বা ও তার । অনেক সময় এই ৩৩ হাজার বিদ্যুৎ তারের ভোল্টেজের শর্টে কঠিন চিকিৎসা, বিকলাঙ্গ ও মারা যাওয়ার ঘটনা রয়েছে।। তবুও তাদের কপালে বিদ্যুৎ আলো জুটেনি। এ গ্রামগুলো হচ্ছে, গাইন্দ্যা পাড়া প্রায় ৩ শতাধিক ঘর, ক্রংসাগই পাড়া ৫০টি, লংগদু ও লংগদু পূর্নবাসন পাড়া ৫০টি, ওগাড়ী পাড়া ৬০টি, ইয়ং পাড়া ৪৫টি, তরগুমুখ পাড়া ৪০টি। এছাড়া উপজেলা সদরের পার্শ্বে ৩কিমিঃ মধ্যে ৫০০টি ঘর মানুষের জীবন চলছে হাটতে আলো হাটতে কালো অন্ধকার। অথচ এটি রাজস্থলী উপজেলা সদর ইউনিয়ন।
এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উথান মারমা বলেন, বেশিভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় জনগনের চাহিদা মোতাবেক সোলার বিতরণ করার সম্ভব হচ্ছে না। দলমত নির্বিশেষে এই ইউনিয়নটিকে দ্রুত উন্নয়ন করার প্রয়োজন বলে মনে করেন।
৩নম্বর বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের গ্রামের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৪৫টি। এ ইউনিয়নটি অনেকটা সমতল এলাকায়। ফলে সুপেয় পানি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ ও জনগনের নাগরিক সুবিধা রয়েছে উন্নতমানে।
এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঞোমং মারমা বলেন, নানা প্রতিকুলতা কারণে ৮টি গ্রামে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, অচিরের সুব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগ রাজস্থলী শাখা সাধারণ সম্পাদক পুচিংমং মারমা বলেন, স্থানীয় জনগনের চাহিদা মোতাবেক আমরা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সব ধরণে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য আমাদের কাছে রোডম্যাপ রয়েছে। সব উন্নয়ন এক সাথে করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ১নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের রাজস্থলী বাজার ৬নম্বর ওয়ার্ডে তিন বারের নির্বাচিত সদস্য মো. আবুল হাসেম বলেন, এসব এলাকার বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ ক্ষেত্রে প্রতিকুলতা হচ্ছে এলাকার নীতি নির্ধারকদের সদিচ্ছার অভাব।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.