সরকারি বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দিতে মিটার পরিবর্তন করাকে পিডিবি আইনে ‘মিটারের ক্যাশ ব্যাংক লুঠ’ অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। আর এ অপরাধের অভিযোগে রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মঙ্গলবার এ কমিটি ঘটনাস্থল কাউখালীর বেতবুনিয়া পরিদর্শনে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আবাসিক প্রকৌশলী হাসির উদ্দিন মিয়া।
জানা গেছে, কাউখালী উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের হেলপার মোঃ মামুন গ্রাহকের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে একটি পুরনো বাণিজ্যিক মিটার পরিবর্তন করে প্রায় ৪৪ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ৩ মার্চ বিদ্যুৎ বিভাগের কাউখালী উপজেলার আবাসিক প্রকৌশলী হাসির উদ্দিন মিয়া অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানান। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ মার্চ খাগড়াছড়ির বিউবো’র র্নিবাহী প্রকৌশলী উগপ্রু চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন রাঙামাটি বিউবো’র হিসাব রক্ষক (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল) স্বপন দাশ ও বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী খোরশেদ আলম।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের বেতবুনিয়া শিকদারপাড়া পোল্ট্রি খামারি মোঃ হাসান (হিসাব নম্বর-ই/৮২৩) দীর্ঘদিন ধরে কাউখালী বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মচারীদের যোগসাজসে কম বিদ্যুৎ বিল দেখিয়ে সরকারি অর্থ ফাঁকি দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের বিদ্যুৎ বিলের কপিতে দেখা গেছে পূর্ববতী ইউনিট ১৪৩০০ ও বর্তমান ব্যবহৃত ইউনিট ১৪৫০০ অর্থাৎ ২০০ ইউনিটের বিল দেওয়া হলেও জব্দ করা মিটারে পাওয়া গেছে ১৮৮৪৯ ইউনিট। অথচ মিটারে জমা রয়েছে ৪৩৪৯ ইউনিট। গ্রাহকের সাথে ‘ফিফটি ফিফটি’ চুক্তিতে মিটারটি (নম্বর ০৩৬৮৭৫) খুলে গত ২২ ফেব্রুয়ারী সেখানে নতুন ডিজিটাল মিটার স্থাপন করেন হেলপার মামুন। এতে সরকার ৪৩ হাজার ৭৪৩ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হলেও মামুন পকেটে পুড়েছে ২৫ হাজার টাকা।
হেলপার মামুনের দাবী করে জানান, ২৫ হাজার টাকা নয় ১২ হাজারেই চুক্তি করেছিলেন। মিটার পরিবর্তনে গ্রাহকের লিখিত আবেদন ও দাপ্তরিক পূর্বানুমতির প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি মাসেই ৮থেকে ১০ টি পুরনো মিটার খুলে নিয়ে নতুন ডিজিটাল মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। আমিও করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউখালী বিদ্যুৎ সরবরাহের একাধিক কর্মচারী জানান, এভাবে বকেয়া জমে মোটা অংকের বিল হলেই ‘ফিফটি ফিফটি’ চুক্তিতে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে মিটার। এতে গ্রাহকের ব্যয় অর্ধেক কমে গেলেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তবে রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ দাশ জানান, বয়স হয়েছে, সবকিছু মনে থাকে না, কাগজপত্র দেখে বলতে হবে, ফোনে বলা যাবে না।
কাউখালী বিদ্যুৎ সরবরাহে ৮ বছরের অধিক সময় দায়িত্বে থাকা, খাগড়াছড়ির মহলাছড়ির বর্তমান আবাসিক প্রকৌশলী সুভাষ কান্তি চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকারি বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দিতে ইউনিটসহ মিটার পরিবর্তন করাকে পিডিবি আইনে ‘মিটারের ক্যাশ ব্যাংক লুঠ’ অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়
বিদ্যুৎ বিভাগের কাউখালী উপজেলার আবাসিক প্রকৌশলী হাসির উদ্দিন মিয়া জানান, ঘটনাস্থল সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানানোর পর তিনি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। পূর্বানুমতি ছাড়া মিটার পরিবর্তন করা বড় ধরণের অপরাধ বলে জানিয়ে তিনি জানান, অনুমতি নিয়েই প্রতিমাসে মিটার পরিবর্তন করা হচ্ছে। ব্যবহৃত ইউনিটের বিলও পরিশোধ করা হচ্ছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.