খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে অবিলম্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠনের দাবী জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি আওয়ালীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার খাগড়াছড়িতে আয়োজিত আওয়ামীলীগের কর্মী সন্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি কাছে নেতাকর্মীরা এসব দাবি করেন। খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হলে আয়োজিত কর্মী সন্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনের নির্বাচিত সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। এ সময় খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী পূর্নবাসন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা বীর কিশোর চাকমা অটল, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক শাহানা আক্তার প্রমুখ। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা, জেলা আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান উপদেষ্টা নুরনবী চৌধুরী, সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা, দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ কাশেম, মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নীলোৎপল খীসা, পানছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক জয়নাথ দেব, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক বেলাল হোসেন বেপারী, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, পৌর আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক মোঃ জাবেদ হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি যতন কুমার ত্রিপুরা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এড. জ্ঞানজ্যোতি চাকমা, জেলা মৎস্যজীবি লীগের সাঃ সম্পাদক মানিক পাটোয়ারী এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল বাহার। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক মোঃ জাহেদুল আলম। চার ঘন্টা স্থায়ী কর্মী সন্মেলনে প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত থেকে তিনি মনযোগ দিয়ে শোনেন তৃণমুল নেতাদের সুখ-দুঃখ আর বেদনার কথা। এসময় প্রায় দুই ডজন জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বক্তব্যে উঠে আসে, খাগড়াছড়িতে সরকারী দলের সাংগঠনিক অস্থিরতা আর হতাশার কথা। উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর পর শুক্রবার খাগড়াছড়ি সফর করলে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও এখন। তিনি তিন পার্বত্য জেলাতেই নয় শুধু তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে টানা পাঁচবার নির্বাচিত এমপিও। পাহাড়ের রাজনীতির এই ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন, খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতাকর্মীরা।কারণ ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাত জোটের শাসনামলে হামলা-মামলা-নির্যান-নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাছাড়া হয়েছিলেন খাগড়াছড়ি’র কয়েক হাজার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী। সেই দুঃসময়ে বীর বাহাদুর-ই একান্ত পাশে থেকে আগলে রেখেছিলেন, খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগকে। তাই তিনি প্রতিমন্ত্রী আসবেন বলে, খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য সভা ও সংবর্ধনার। প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদায় শরণার্থী পূর্নবাসন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা তার বক্তব্যে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ আইনের সদ্য সংশোধিত আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে একজন জনপ্রতিনিধিকেই বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হবে। তাই জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নয়ন বোর্ডে অবিলম্বে একজন জনপ্রতিনিধিকেই নিয়োগ দেয়া শ্রেয়। পার্বত্য জেলা পরিষদের দীর্ঘদিনের সদস্য এবং জেলা আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা বীর কিশোর চাকমা অটল বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদকে সরকারের হস্তান্তরিত জনগুরুত্বসম্পন্ন ২৭টি বিভাগ ও বিষয় দেখভাল করতে হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে একজন অস্থায়ী চেয়ারম্যান এবং দুই সদস্য দিয়ে পরিষদ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই অবস্থায় প্রত্যাশিত জন-আকাঙ্খা পূরণে পরিষদের পূর্নগঠন যেমন জরুরী, তেমনি বাড়ানো উচিত সদস্য’র সংখ্যাও। মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক সুভাষ চাকমা বলেন, একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের আমলে উন্নয়ন বোর্ডের মতো জন-প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন একজন আমলাকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। আর এতে জনগণের এবং দলের নেতাদের প্রত্যাশিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক শাহানা আক্তার বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত সময়ের দাবী। তাই পূর্নগঠিত জেলা পরিষদে একজন পাহাড়ী এবং একজন বাঙ্গালী নারী সদস্য মনোনয়ন দেয়ার পদক্ষেপ চাই। মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামলিীগের সভাপতি ও যোগ্যাছোলা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল বলেন, সরকারের টিআর-কাবিখা কর্মসূচীতে দলের তৃণমুলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলগের সাঃ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমা ‘গুইমারা’-কে উপজেলা ঘোষণায় সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, গত মেয়াদে এবং চলমান মেয়াদে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও তা প্রত্যাশিত মাত্রায় প্রচার পাচ্ছে না। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর নেতাদের এসব বক্তব্য এবং দাবীর প্রেক্ষিতে বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ একজন জনসেবক। আপনাদের অনেক বক্তব্যেও সাথে আমি নিজেও একমত। তাই নেত্রীর কাছে আপনাদের নির্বাচিত নেতা এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’-এ চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে বর্ধিত কলেবরে পূর্নগঠনের বার্তা পৌঁছে দেবো। বীর বাহাদুর দলের ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল’ পর্যন্ত দলের তৃণমুল কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতি জেলা নেতাদের সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা অনেকে সেসময় ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু সেই দুঃসময়ে কর্মীরাই দলকে ধরে রেখেছেন। তাই দল ক্ষমতায় থাকাকালে তৃণমুলের কর্মীদের মুল্যায়ন করতে হবে। তিনি তৃণমুলের নেতাকর্মীদের সুবিধাভোগী এবং সুবিধাবাদীদের নেতাদের সর্ম্পকে সজাগথাকারও আহ্বান জানান।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.