বিগত শিক্ষাবর্ষে তিন পার্বত্য জেলার সব কয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আদিবাসী শিশুদের প্রথমবারের মতো প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের নিজ নিজ মাতৃভাষার বই দেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবছরও প্রথম শ্রেণীতে দেওয়ার কথা থাকলেও, এখনো বই হাতে পায়নি জুরাছড়ি উপজেলার ৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।
সরকারের পক্ষ থেকে “ জাতীয় স্কুল শিক্ষা পাঠ্যক্রম (এনসিটিবি)” বিগত শিক্ষাবর্ষে আদিবাসী শিশুদের পাঠদানের উদ্দেশ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের শুরুতে তিন পার্বত্য জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই ও খাতা পৌছনো হয়। কিন্ত প্রয়োজনীয় দাফতরিক নির্দেশনা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত না হওয়ায় প্রেরিত বই-খাতাগুলো গেল বছর (অথাৎ ২০১৭ সালে) নিজ নিজ বিদ্যালয়ে আলমারিতেই বন্দি ছিল। চলতি শিক্ষাবর্ষে এখনো পর্যন্ত পর্যপ্ত বই সরবরাহ না থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদান। এছাড়া বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট ও স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের প্রশিক্ষণ অভাবে পাঠদান নিয়ে সংশয় রয়েছেন অভিভাবকরা।
জানা গেছে, পার্বত্য চুক্তির পর কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এজিও) একদশক পরিক্ষামূলকভাবে বিদেশী অর্থায়নে তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার কার্য্যক্রম অব্যহত রাখে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার এনসিটিবির মাধ্যমে পাঠ্যক্রম চুরান্ত করে ২০১৬ সালে দেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, রাখাইন ও সাদ্রি ভাষায় পাঁচটি আদিবাসী শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক বই ও প্রাসঙ্গিক ভাবে অলঙ্কৃত থাতা প্রণয়ন করে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে পৌছানো হয়। কিন্ত বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষায় পাঠদানের দক্ষ শিক্ষক না থাকায় কার্যক্রমটি শুরু থেকেই মূখ থুবড়ে পড়ে। সেচ্ছাসেবী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারের লক্ষ্যকে এগোতে মাঠে নামলেও তা একেবারেই অপ্রতুল। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকদের এসব মাতৃভাষায় পাঠদানের স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও ইউএনডিপির-সিএইচটিডিএফের স্থাপতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (সম্প্রতি ২৫টি জাতীয়করণকৃত) শিক্ষকদের কোন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।
মৈদং ইউনিয়নের শীলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক রবি চাকমা বলেন, প্রাক প্রাথমিক আদিবাসী শিক্ষার্থী চাহিদা অনুসারে পাঠ্য বই সরবরাহ করা হয়েছে তুলনা মূলক ভাবে অনেক কম।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের শীমেই তলী, করল্যাছড়ি, ডানে সুবলং সরকারী সহকারী প্রধান শিক্ষক ¯েœহ কুমার চাকমা, সুনীতি রঞ্জন চাকমা, মুনি শংকর চাকমা বলেন, পর্যাপ্ত পাঠ্য বই দেওয়া হলেও মাতৃভাষার বই এখনো শিক্ষার্থীরা পাইনি। তবে দ্রুত সরবরাহ করার জন্য চিঠি পাটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পানছড়ি ভুবন জয় সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিত্যা নন্দ চাকমা বলেন, শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের ক্ষেত্রে উচ্চারণ, শব্দার্থ ও বানানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাতৃভাষাভিত্তিক পাঠদানের ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত প্রশিক্ষণ জরুরী।
জুরাছড়ি আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুরেশ কুরার চাকমা বলেন, শিক্ষকদের স্বল্প মেয়াদি মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণ প্রদান করে শিশুদের পাঠদান করানো সম্ভব নয়। গুণগত ভাবে মাতৃভাষায় শিশুদের পাঠদানের লক্ষে প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাতৃভাষার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা সময়ের দাবী।
উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কর্মকর্তা মোঃ মরশেদুল আলম বলেন, ইতিমধ্যে শিক্ষকদের স্বল্প মেয়াদি শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ কুমার ধর বলেন, আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষার পাঠ্য বই সরবরাহ কম তাকায় সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত সরবরাহ করার জন্য চাহিদা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, বছর শুরুতে সকল বই শিশুদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও সঠিক সময়ে মাতৃভাষার বই না পৌছানো খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আলোচনা করা হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.