পাংখোয়া সম্প্রদায় পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী। পাহাড়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে এই সম্প্রদায়ের বসবাস খুবই কম। তবে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি,বিলাইছড়ি,বরকল,জুরাছড়ি উপজেলা এবং বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় পাংখোয়াদের বসবাস রয়েছে। এছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্যের বিপুল সংখ্যক পাংখোয়া সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। পাংখোয়া সম্প্রদায়ের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের গান ও নৃত্য। এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই জুমচাষ ও বন্যপ্রাণী শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তারা বন্যপ্রাণী শিকারের পর সেগুলোর বন্য প্রানীর মাথা বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে রাখেন। বাঘ,গয়াল প্রভৃতি বন্যপ্রাণী শিকার করতে পারলে তারা তা বীরত্ব হিসেবে গণ্য হন। পাংখোয়া নারীরা পিতলের তৈরি বিভিন্ন কটিবন্ধ ব্যবহার করে থাকেন। পাংখোয়া নারীরা সাধারনত স্কার্ট কোমরে জড়িয়ে রাখার জন্য পিতলের রিং কটিবন্ধ হিসেবে ব্যবহার করেন। অনেক নারী ঘুঙুর জাতীয় শিকল আড়াআড়ি করে পরেন এবং মাথায় ও গলায় নক্সা করে পুঁতির মালা পরে থাকেন। পাংখোয়াদের মাঝে ঐতিহ্যবাহী সাজগোজের প্রচলন রয়েছে। তবে তারা ফ্যাশন অনুরাগী। পাংখোয়া নারীরা নিজস্ব রঙের থামি কাপড় পরার পাশাপাশি স্কার্ট ও ব্লাউজ পরে। অতীতে পাংখোয়া নারীরা পানিতে ছাই মিশিয়ে তা ছেঁকে পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতেন। তারা এখন বিশেষ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন। পাংখোয়া পুরুষরা সাধারণত প্যান্ট,শার্ট পরিধান করে থাকেন। পাংখোয়া পুরুষ হাতে চুড়ি,কানফুল,চুলে ক্লিপ ও ফুল, মথুরা বা বন মোরগের পালক ,রাজধনেশ ও ভিমরাজ পাখির পালক এসব পুরুষরা চুলের ঝুটিতে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করেন। পাংখোয়া সম্প্রদায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এখন তাদের সমাজে পশ্চিমা সংস্কৃতির সাজগোজ রয়েছে। প্রকৃতিগতভাবে পাংখোয়া সম্প্রদায় গান ও নৃত্যে পারদর্শী। ছোট থেকে তারা নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আঙ্গিকে গান-বাজনা ও নৃত্য চর্চা করেন। পাংখোয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ নৃত্য অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও জনপ্রিয় নৃত্য। বাজনার তালে তালে, তালের ঝংকারে,সুরের মুর্ছনায় ছন্দময় বাঁশের ফাঁকে যখন তরুণীরা নৃত্য পরিবেশন করে তখন দর্শকের হৃদয়-মন আনন্দে হয়ে উঠে দৃষ্টিসুখকর। শিকার মিললে তারা শিকারী গানের তালে তালে বন্য প্রাণীর শির নিয়ে নৃত্য করে থাকেন। পাংখোয়াদের শিকারী নৃত্যের গান হল সা-খা-লা…। জুম কাটার সময় একাকীত্ববোধ করলে তারা লোকগীত ভার হাই লা… গেয়ে থাকেন। শোকাহত পরিবারকে সাত্বনা দেয়ার জন্য তারা দলীয় নৃত্য লেং দেয় লা… পরিবেশন করে থাকেন। বাচ্ছা ঘুমপাড়ানোর জন্য ওরা নাউ ওয়াই লা… গানটি গেয়ে থাকেন। পাহাড়ের চুড়ায় তাদের বাড়ীগুলো মাচাং করে তৈরি করা হয়। তবে অধিকাংশ বাড়ির ভেতরে পৃথক পৃথক কক্ষ বা বেড়া থাকে না। পাংখোয়া সম্প্রদায়রা তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিজস্ব গান ও নৃত্যের মাধ্যমে চমৎকারভাবে তুলে ধরে থাকেন।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.