বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে রেংইয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ায় অগ্নিসংযোগ ও হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাঙামাটিতে মানববন্ধন করেছে
হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
মানববন্ধন থেকে নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশন কাজ করতে পারতো ভূমি সমস্যার সমাধান হতো। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভূমি কমিশনের কার্যক্রম করতে পারছে না। কমিশনের জন্য আঞ্চলিক পরিষদ কতৃর্ক প্রেরিত বিধিমালা সরকার অনুমোদন না দেওয়ায় ভূমি কমিশন কাজ করতে পারছে না। বক্তারা হামলাকারীদের দ্রুত শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো পরিবারগুলোকে যথাযথ পুনর্বাসন করা না হলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সামনে আয়োজিত ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য সোনারিতা চাকমা। এত বক্তব্যে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ শিক্ষার্থী এলি চাকমা। মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাঞ্চনা চাকমা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হিরা চাকমা।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বান্দরবানে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ম্রোদের গ্রামে রাবার কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে একেরপর এক হামলা চালাচ্ছে। ম্রোদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ, ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা চেষ্টা, সর্বশেষ রাতের আঁধারে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হল।বারবার প্রতিবাদ জানানোর পরেও প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। প্রশাসনের কাছ থেকে যদি এটির সমাধান না আসে তাহলে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা সংহতি জানিয়ে বলেন দেশকে এগিয়ে নিতে উন্নয়ন দরকার। কিন্তু, পাহাড়ে উন্নয়নের কথা বলে রাতের আধারে লুটপাট করা হয়, জায়গা জমি কেড়ে নেওয়া হয়। এখন উন্নয়নের কথা শুনলে আমরা উচ্ছেদ হওয়ার ভয়ে আতঙ্কে থাকি। লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কোম্পানির হীন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো পরিবারগুলোকে যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা বলেন যারা রক্ষক তারাই ম্রোদের অধিকার হরণ করছে। যারা আইনের শাসন করতে শেখায়, যারা নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে, তারাই ম্রোদের ভূমি দখল করতে রাবার কোম্পানিকে আশ্রয় দিয়েছে। ঘটনার ৪দিন হওয়ার পরেও কোনো মামলা হয়নি। দোষীরা দিনে দুপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টো প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নানা ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। যার ফলে ভুক্তভোগী ম্রোরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসন রাবার কোম্পানিকে যেভাবে ভূমি লিজ দিয়েছে সেটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আইন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। লীজ নিয়েও লীজের শর্ত ভঙ্গ করায় ১৬০০ একর ভূমির উপর তাদের মালিকানা থাকতে পারে না। তিনি লামা রাবার কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানান।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সকল সমস্যা শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে সমাধানের লক্ষ্যে অতি দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.