মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সন্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ ২৬ বছর পর সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়ায় এখন সবাইয়ের দৃষ্টি এ সন্মেলনের দিকে। কে হচ্ছেন সভাপতি? সভাপতির পদে দুই যুগের অধিক ধরে আকড়ে থাকা দাদা বলে খ্যাত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন।
অপরদিকে দুই বদ্দা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হাজী মুছা মাতব্বর এবং সাবেক সাধারন সম্পাদক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য হাজী মোঃ কামাল উদ্দীন প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন। দৃশ্যত এ নির্বাচনে দাদা-দাদা ও বদ্দা-বদ্দা খেলা জমে উঠেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ সালে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী সন্মেলন ১৫ নভেম্বর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা সন্মেলনে উপস্থিত থাকতে না পারায় সন্মেলন স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ বছর ধরে সন্মেলন ছাড়াই কমিটির থাকার পর আগামী ২৪ মে সন্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সন্মেলনকে ঘিরে শুধু আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তাপ ও নানান কৌতুহল সৃষ্টি হয়েয়েছে। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে চার হেভিওয়েট প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করায়। সাধারন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হাজী মুছা মাতব্বর এবং সাবেক সাধারন সম্পাদক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য হাজী মোঃ কামাল উদ্দীন। ১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আর কেউই তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করার মনোভাব পোষন করতেন না। সেই থেকে সভাপতি পদটি দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় ধরে দীপংকর তালুকদার তার কব্জায় রেখেছেন। তবে দীর্ঘ ২৬ বছর পর সভাপতি পদে নিখিল কুমার চাকমা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় দীপংকর তালুকদারের মাথা ঘামিয়ে দিয়েছেন।
দলের অনেক নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এই সন্মেলনের মাধ্যমে দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন চান। দীর্ঘ দিনের আধিপত্য, একক নেতৃত্ব ও দলের নেতাকর্মীদের বঞ্চনা, মনো বেদনা থেকেই পরিবর্তন আনতে চান তারা। আবার অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যভাবে কিছুই বলতে চাইলেও রয়েছে পরিবর্তনের মনো সমর্থন।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিখিল কুমার চাকমা বিগত পাঁচ বছরে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালনের সময় দলীয় নেতাকর্মীসহ পাহাড়ী-বাঙালী থেকে সুশীল সমাজের কাছে বেশ গ্রহনযোগ্যতা লাভ করেছিলেন। এক কথায় তিনি শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের নয় পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে সম্প্রীতি বজায়সহ সকল স্তরের সাথে একটা সুসম্পর্ক রেখে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এবারও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নয়নসহ সেই একই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এদিকে, বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী এবং সমর্থক ও নেতাকর্মীরা কাউন্সিলদের বার বার বৈঠক করে চলেছেন। প্রতিদ্বন্ধি সমর্থক নেতাকর্মীরাও বসে নেই তারাও যে যার প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্য-অপ্রাকাশ্য মাঠে নেমেছেন। একই সাথে সাধারন সম্পাদক পদের দুই প্রতিদ্বন্ধিরা প্রার্থীরাও বসে নেই। তারাও বিজয়ের জন্য মরিয়া উঠেছেন। তবে যাই হোক না কেন জেলা আওয়ামীলীগের ২৪৬ জন কাউন্সিলরের উপর নির্ভর করছে দাদা-দাদা ও সাধারণ সম্পাদক পদে বদ্দা-বদ্দা-দের ভাগ্য। এই কাউন্সিলররাই নির্ধারণ করবেন জেলা আওয়ামীলীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। তাই এই কাউন্সিলকে ঘিরে বর্তমানে চায়ের দোকান থেকে সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু পরিণত হয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব শেষ পর্ষন্ত কার হাতে যাচ্ছে? তবে তার জন্য সোমবার ২৪ মে পর্ষন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সাধানর সম্পাদক পদের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হাজী কামাল উদ্দীন বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণত ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন হয়ে থাকে। কিন্তু সাড়ে ৯বছর সন্মেলন হয়নি। তার মধ্যে অবশ্যই করোনার কারণে সন্মেলন হতে পারেনি। এই সাড়ে নয় বছরে দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। জেলা যুবলীগ থেকে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। তবে চার বছরে তিনি সাধারন সম্পাদক দায়িত্ব পালনকালে দলের কোন দ্বিধা বিভক্তি ছিল না। কিন্তু বর্তমান সাধারন সম্পাদকের খারাপ ব্যবহারের কারণে উপজেলা কাউন্সিলর থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে অনেক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাই দলের পূর্বে ভালো অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং দলের নেতাকর্মীরা আমাকে সাধারণ সম্পাদক পদে আবারো দেখতে চায় বলে এই পদে দাঁড়িয়েছেন। তাই আমি আশাবাদী অবশ্যই বিজয়ী হবো।
সভাতি পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা বলেন, দীপংকর তালুকারকে চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন করছি না। তিনি আমার নেতা, তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সেহেতু সকলেরই যে কোন পদে নির্বাচন করার অধিকার রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সভাপতি পদে নির্বাচন করছি। প্রত্যোকে বিজয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচন করে এবং আশাবাদী বলেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছি। তিনি আরো বলেন, অনেক কাউন্সিল, নেতাকর্মীরা অনুরোধ করেছেন, বিশেষ কাউন্সিলরদের অনুরোধের কারণে তাদের প্রতি সন্মান দেখিয়ে এই নির্বাচন করছি।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন হাজী মূছা মাতব্বর জানান, আগামী ২৪ মে জেলা আওয়ামীলীগের সন্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মাঠে সন্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশালফ হোসেন এমপি। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারন সাধারন সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দূল কাদের এমপি। এছাড়া আরো উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রসারণ মন্ত্রী হাসান মাহমুদ এমপি, আল মাহমুদ এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তিনি আরো বলেন, নেতাকর্মীদের ও সবাইয়ের সমর্থনে আবারো সাধারন পদে নির্বাচন করতে যািেচ্ছ। বিজয়েরে জন্য অবশ্যই আশাবাদী। আশাকরি দলের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলররা পুনরায় আমাকে সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত করবেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.