রোববার রাঙামাটিতে নতুন বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে উৎসব মূখর পরিবেশে চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশুদের হাতে মাতৃভাষার বই তুলে দেয়া হয়েছে।
রাঙামাটি শহরের বনরুপা সরকারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশুদের হাতে মাতৃভাষার বই তুলে দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। এসময় রাঙামাটি জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য জেবুন্নেসা রহিম, বনরুপা সরকারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা তালুকদার ও কানাডা ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও এর উপচার্য অমিত চাকমার মাতা আলো চাকমা।
জানায়, নতুন বছরের শুরুতে রাঙামাটির ১০টি উপজেলার ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর মোট ১লক্ষ ৩হাজার ৮শত ৮৯জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৪লক্ষ ৯৮হাজার ৭শত ৮৯টি বই বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রথমবারের মত প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজস্ব ভাষায় ১২হাজার ৮শত ৩১টি বই ও অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত বইয়ের মধ্যে রয়েছে চাকমা ভাষায় ১ হাজার ৮২টি, মারমা ভাষায় ২ হাজার ২৬৬টি ও ত্রিপুরা ভাষায় ৫ শ ৮৩টি।
অপরদিকে, শহরের নিউ রাঙামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। এসময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জিল্লুর রহমান, সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা, প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, নিউ রাঙামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মহসিন রানা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া শহীদ আবদুল আলী একাডেমীতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হারুনূর রশিদ, প্রধান শিক্ষক নজরুর ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করেন পরিষদ চেয়ারম্যান ।
বই বিতরনের পর রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, এ বছর রাঙামাটি জেলায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষার বই দেওয়া সম্ভব না হলেও আগামী বছর সকল বিদ্যালয়ে বই দেওয়া হবে। এছাড়া মাতৃভাষায় পড়ানোর জন্য কিছু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দেওয়া হবে। তিনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা তিন সম্প্রদায়ের শিশুদের হাতে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের নিজস্ব মার্তৃভাষার বই তুলে দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাঙামাটি জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, নতুন বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষি সম্প্রদায়ের শিশুদের হাতে মাতৃভাষার বই তুলে দেওয়া হয়েছে। রাঙামাটির ১০ উপজেলায় নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে এবছর মাতৃভাষায় মোট ১২ হাজার ৩৮১টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিশুরা তাদের পরিবার থেকে সরাসরি আসার কারণে বাংলা ভাষায় লিখিত যে বইগুলো পড়ে সেগুলো তাদের নিজস্ব ভাষার সাথে মিল না থাকায় অনেক সময় তারা খাপ খাওয়াতে পারে না। এ বই বিতরনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিশুরা মাবার কাছ থেকে যে ভাষাটা শিখে বিদ্যালয়ে গিয়ে যদি সেই ভাষায় শিখতে পারে তাহলে সত্যিকা অর্থে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানসম্মত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে রোধ করতে সক্ষম হবে।
তিনি জানান,রাঙামাটি জেলায় এইসব ভাষাভাষি শিক্ষক থাকলেও তাদের চর্চা নেই। আশাকরি তাদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সেই ভাষার রপ্ত করাতে সক্ষম হবো। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৫০ জন শিক্ষককে মাতৃভাষার উপর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছে তারাই এ বিষয়ে কাজ করবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা.সিআর.