অবশেষে পাহাড়ের বসবাসরত পাহাড়ী সম্প্রদায়ের শিশুরা নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা বই পাচ্ছে। রোববার নতুন বছরের নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষি সম্প্রদায়ের শিশুদের হাতে এই মাতৃভাষার বই তুলে দেওয়া হবে। তবে রাঙামাটি জেলায় অপাতত ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃভাষার প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হচ্ছে।
জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ এগার ভাষাভাষি ১৩টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বসবাস। এসব জনগোষ্ঠীদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা,সংস্কৃতি,কৃষ্টি ও ঐতিহ্য। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তিতেও এ অঞ্চলের বসবাসরত পাহাড়ী শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া রোধ ও জনগোষ্ঠীদের শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিতে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা পদ্ধতি চালুর কথা রয়েছে।
এছাড়া ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে পাহাড়ী সম্প্রদায়ের শিশুদের মাতৃভাষায় পড়ালেখা করার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘ দাবী দাওয়া ও সমালোচনার পর অবশেষে পাহাড়ী শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা পাঠ্য বই তুলে দিচ্ছে সরকার।
রোববার ২০১৭ সালের নতুন বছরে নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে পাহাড়ী শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা পাঠ্য বই তুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে চাকমা,মারমা, ত্রিপুরা ও সাত্রী ভাষা-ভাষী শিশুদের জন্য ১৫ হাজার ২শ ১১টি মাতৃভাষার বই পৌছেছে। এসব ভাষাভাষীদের মধ্যে চাকমা ভাষায় ১০হাজার ৮২টি, ত্রিপুরা ভাষায় ২ হাজার ৫৮৩টি, মারমা ভাষায় ২হাজার ১৬৫টি এবং সাত্রী ভাষায় ৩শ ৮১টি। তবে এসব মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হলেও অপাতত এ জেলায় ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চালু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চাকমা ভাষা গবেষক প্রসন্ন কুমার চাকমা বলেন,মাতৃভাষায় পাঠদানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের ঝড়ে পড়ার হার কমে যাবে। কারণ বাড়ীতে যে ভাষায় কথা বার্তা বলবে সেই ভাষায় বিদ্যালয়ে তারা কথাবার্তা বলতে পারবে। যার কারণে শিশুদের বিদ্যালয় থেকে পলায়ন রোধ হবে।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জিল্লুর রহমান জানান,প্রত্যক বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় বিনা মূল্যে বিতরনের জন্য ইতোমধ্যে বই পৌছে গেছে। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও সাত্রী ভাষা-ভাষী শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় ১৫ হাজার ২শ ১১টি বই পৌছেছে। তবে রাঙামাটি জেলায় চাকমা সম্প্রদায়ের শিশুর সংখ্যা বেশী সেজন্য চাকমা ভাষায় বই বেশী এসেছে। রোববার রাঙামাটি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এসব বই নতুন বছরের নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে বিতরণ করা হবে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের মাতৃষাভায় প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৫ সাল থেকে চালু করার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন কারণে তা চালু করা সম্ভব হয়নি।
তবে ২০১৭ সাল থেকে চাকমা,মারমা,ত্রিপুরা ভাষায় মাতৃভাষায় বই চালু করা হচ্ছে। এ জন্য অপাতত রাঙামাটি জেলায় ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় শিক্ষার পাঠদান করা হবে। কারণ ৫০টি বিদ্যালয়কে এসব ভাষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে আরো প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.