পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সময় সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষনা করে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ১ মে থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরুর ঘোষণার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে রোববার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় সন্মেলন রোববার রাঙামাটিতে সমাপ্ত হয়েছে।
এদিকে, সন্মেলনের মধ্য দিয়ে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)-কে সভাপতি ও প্রণতি বিকাশ চাকমাকে সাধারন সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোববার বিকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, তিন ব্যাপী সন্মেলনে সংগঠনের প্রতিবেদনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনসহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপ, পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা, পার্টির ভবিষ্যত কর্মপন্থার উপর আলোচনা করা হয়েছে।
প্রেস বার্তায় বলা হয়, সন্মেলনে নেতৃবৃন্দ আগামী ৩০ এপ্রিল মধ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সময়সূচি ভিত্তিক কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ১ মে থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও সরকার গিয়ে না আসায় নেতৃবৃন্দ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবং বাকী সময়ের মধ্যে সরকার এগিয়ে না আসলে পূর্ব ঘোষণা অনুসারে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার জন্য সম্মেলনের প্রতিনিধিবৃন্দ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সন্মেলনে নেতৃবৃন্দ,দেশের শাসকগোষ্ঠী একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও সংস্কারপন্থীদের মদদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং অন্যদিকে সেটেলার বাঙালিসহ সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিকে লেলিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা, জুম্ম নারীর উপর হত্যা ও ধর্ষণ, অবাধে অব্যাহত অনুপ্রবেশ ইত্যাদির মাধ্যমে জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলে জুম্ম জনগণ এক নিরাপত্তাহীন অনিশ্চিত জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রেস বার্তায়, জনসংহতি সমিতির মধ্যে গুরুরুত্বপুর্ন পদে সহ-সভাপতি পদে উষাতন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শক্তিপদ ত্রিপুরা নির্বাচিত হয়েছেন। তবে নব নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির ৩১ সদস্যের মধ্যে ২৯ সদস্যের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাকী দু’টি সদস্যপদ শূন্য রাখা হয়। পরবর্তীতে সুবিধা মত সময়ে এ শূন্য পদ পূরণের জন্য জাতীয় সম্মেলন নব নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটিকে দায়িত্ব অর্পণ করা হবে প্রেস বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সন্মেলনে সরকার কর্তৃক সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবীকে সামনে রেখে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন অধিকতরভাবে জোরদার করতে ২২ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে।
সেগুলো হল,পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন কার্যকর করা এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটার তালিকা প্রণয়ন পূর্বক এসব পরিষদের নির্বাচন,পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ (স্থানীয়), ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হস্তান্তর,২০ জানুয়ারি ২০১৫ অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভায় গৃহীত সুপারিশ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধন পূর্বক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা,পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অপারেশন উত্তরণসহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা,প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী, আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও জনসংহতি সমিতির সদস্যদের যথাযথ পুনর্বাসন করা,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসসহ সকল প্রকার অপতৎপরতা নির্মূলীকরণের কার্যক্রম জোরদার করা,৩০ এপ্রিল ২০১৫-এর মধ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সময়সূচি ভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে পূর্ব ঘোষণা অনুসারে ১ মে ২০১৫ সাল থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা,আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে জুম্ম জাতীয় ঐক্য ও সংহতি জোরদার করা,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ করার কার্যক্রম জোরদার করা,দেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনে অধিকতর সামিল হওয়া,দেশের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদী তৎপরতা প্রতিরোধ আন্দোলনে অধিকতর শরিক হওয়া,দেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সারা বিশ্বের আদিবাসী ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আরও শরিক হওয়া, দলীয় নীতি-আদর্শে অধিকতর সজ্জিত হয়ে পার্টি নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা,দলীয় নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে গণ সংগঠন, কর্মী সংগঠন ও পরিবার সংগঠন জোরদার করা,পার্টির সদস্যপদ সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার করা এবং পার্টির নি¤œস্তরের কমিটি ও শাখা/ইউনিটসমূহের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ের কাজ জোরদার করা,ছাত্র-যুব ও নারী সমাজকে আন্দোলনে সামিল করার লক্ষ্যে ছাত্র-যুব ও নারী সংগঠনের কার্যক্রম জোরদার করা,পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে দেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কর্মরত জুম্ম শ্রমিক ও কর্মজীবীদের সংগঠন গড়ে তোলার কাজ জোরদার করা,পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষি জুম্ম জনগণকে অধিকতর উৎপাদনে উৎসাহিত ও সচেতন করা,পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকতর অনগ্রসর জুম্ম জাতিসমূহের শিক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা,জুম্ম জনগণের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চয়তা বিধানসহ ভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা,জুম্ম জাতিসমূহের স্ব স্ব রীতিনীতি, প্রথা ও সামাজিক আইন সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা,পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী-বাঙালি স্থায়ী অধিবাসীদের উপর অর্থনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার করা, ক্যাম্প সম্প্রসারণ, অবৈধভাবে ইকো-পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা, বহিরাগতদের পুনর্বাসন ইত্যাদির নামে জুমভূমিসহ স্থায়ী অধিবাসীদের রেকর্ডীয় ও ভোগদখলীয় জায়গা-জমি অধিগ্রহণ ও বেদখলের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা,৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত গৃহীত বর্ণবাদী, সাম্প্রদায়িক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী সিদ্ধান্তাবলী প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ২৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পর্যটন (স্থানীয়) বিষয়টির উপর সম্পাদিত ত্রুটিপূর্ণ চুক্তি বাতিল পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক যথাযথভাবে হস্তান্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপরিষদ কমিটির সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটন সংক্রান্ত গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত বাতিল করার কার্যক্রম গ্রহণ করা
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা।