রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই মাস পূর্ণ হল রোববার । আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ক্ষতিগ্রস্থরা এখনো পূর্নবাসিত হয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবে প্রশাসন বলছে মন্ত্রনালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে ও বৃষ্টিপাত কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত পূর্নবাসন করা হবে।
জানা যায়, গেল ১৩ জুন ভারী বর্ষনে পাহাড় ধসে রাঙামাটি সদর,জুরাছড়ি,কাপ্তাই,কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় দুই সেনা কর্মকর্তা ও তিন সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যূ হয়। এ ঘটনায় রাঙামাটি শহরের ভেদেভদী, যুব উন্নয়ন বোর্ড শিমুলতলী,রুপনগর, নতুন পাড়া, মুসলিম পাড়া,মোনঘর এলাকা,ওমদা মিয়া হিলসহ বিভিন্ন এলাকায় লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ২শ জন নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হওয়ায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কিছু সংখ্যক পরিবার নিজ নিজ বাড়ী ঘরে ফিরে যাওয়ায় ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়। বর্তমানে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৩ শ ২৬ জন আশ্রয়ে রয়েছে। এসব আশ্রিত লোকজনদের মাঝে দুবেলা খাবারসহ অনান্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি শহরে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ক্ষতিগ্রস্থদের লোকজনদের ঘটনার দুই মাসেরও পূর্নবাসিত হয়নি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্র হল রাঙামাটি জিমনেসিয়াম, মারী স্টেডিয়াম, মোনঘর ভাননা কেন্দ্র, রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের নবনির্মিত ছাত্রাবাস ও তবলছড়ি হিল কোয়ার্টার।
রাঙামাটি স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুম, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের নবনির্মিত ছাত্রাবাস ও রাঙামাটি জিমনেসিয়াম আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে থাকতে তারা অধৈর্য্য হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কবে তাদের পূর্নবাসন করা হবে কিছুই বলছে। কবে তাদের পূর্নবাসন করা হবে বা তারা নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরতে পারবেন তারাই কিছ্ইু জানতে পারছেন না। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে কত দিন আশ্রয় কেন্দ্রে পড়ে থাকবেন। তাদের পরিবারের ভবিষ্যত রয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পূর্নবাসনের দাবী জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের সংখ্যা বেশী। তাই মন্ত্রনালয়ের কাছে অধিক পরিমাণের ঢেউটিন ও অর্থ বরাদ্দের সহায়তা চেয়েছি। তবে ভারী বৃষ্টিপাত কমে গেলে অনুকুল পরিস্থিতি ফিরে আসলে এবং মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত পূনর্বাসন করা হবে। ইতোমধ্যে কাউখালী ও কাপ্তাইয়ের ক্ষতিগ্রস্থদের ঢেউটিন ও অর্থ দিয়ে পূর্নবাসন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন,পাহাড় ধসের কারণে কাপ্তাই হ্রদের তলদেশে প্রচুর পরিমাণে পলি মাটি জমে যাওয়ায় হ্রদের পানি সহজে উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হ্রদের আশপাশ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ জন্য হ্রদের কিছু কিছু পয়েন্টে ড্রেজিং করে নাব্যতা রক্ষা করতে হবে। তা না হলে আগামী শুস্ক মৌসুমে ৪ থেকে ৫টি উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য,গেল ১৩ জুন ভারী বর্ষনের কারণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৮ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। এর মধ্যে ১হাজার ২৩১টি পরিবারের বাড়ী ঘর সম্পুর্ণ বিধস্ত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.