প্রতি শুক্রবার রাজভোগ হয়। প্রতি শুক্রবার ৫-৬শ জনের জন্য রাজভোগের প্রসাদের আয়োজন করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ রাজভোগে অংশ গ্রহণ করে। প্রতি শুক্রবারে এ রাজভোগের অর্থ যোগান দেন কোনো না কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বীভক্ত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। যে দিন যে ব্যক্তি রাজভোগের অর্থ যোগান দেন তাঁর জন্য, তাঁর পরিবারের মঙ্গলের জন্য সেদিন প্রার্থনা করা হয়। এটি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার সাঁওতাল পাড়ার লোকনাথ বাবার মন্দিরের চিত্র।
শুক্রবার সরেজমিনে পৌনে ১টায় গিয়ে দেখা যায় মন্দিরে ভেতরে লোকনাথ বারার আরাধনা করা হচ্ছে আর নাম কীর্তন সহকারে রাজভোগ দেওয়া হচ্ছে। আরাধনায় সুর দিচ্ছেন মন্দিরের ব্রাক্ষণ সুধীর চক্রবর্তী। অন্য ভক্তরা সুর মিলিয়ে আরাধনা করছেন। রাজভোগের প্রসাদ নেওয়ার জন্য প্রায় তিন শতাধিক ভক্ত অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রসাদ খাওয়ার সময় এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে উপস্থিত ভক্তরা জানান। ৫৫০ জনের জন্য প্রসাদ তৈরী হরা হয়েছে বলে স্থানীয় কাজল চন্দ্র শীল জানান। রাজভোগের অর্থ যোগান দিয়েছেন পানছড়ি বাজারের সমাজ সেবক টিকলু চৌধুরী।
মন্দিরে কোনো প্রসাদ দেওয়ার কোনো শেড ঘর না থাকায় স্থানীয়দের চাঁদার টাকায় তোলা হচ্ছে একটি ঘর। এ দিনে ৫বস্তা সিমেন্ট দেন সঞ্চয় মল্লিক, এক বান টিন দেন পলাশ দেবনাথ, রুপম গোষ আধাবান টিন, মিটুল সাহা আধাবান টিন দান করেন। আর পাঁচ হাজার ইটসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন পানছড়ি উপজেলার বিশিষ্ট প্রভাবশালী ব্যাবসায়ী সুজি কান্তি দাশ।
মন্দির পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য নারায়ন চন্দ্র কর্মকার ও সংকর দাশ জানান গত শুক্রবার(১৯.৫.১৭) রাজভোগের অর্থ যোগান দেন পানছড়ি বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাহা। এর আগের শুক্রবারে দেন পানছড়ি বাজারের বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী উত্তম বণিক। এভাবে প্রতি শুক্রবারে কোনো না কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যাক্তি এ রাজ ভোগের অর্থ যোগান দেন। যে শুক্রবার রাজভোগ দেওয়ার কোনো ব্যাক্তি না থাকে সে শুক্রবার কমিটির পক্ষ থেকে রাজভোগ দেওয়া হয।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি উজ্জ্বল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজল শীল বলেন মন্দির পরিচালনা করার জন্য তাদের তেমন অর্থ নেই। ভক্তদের মাসিক টাকায় ব্রাক্ষণের মাসিক সন্মানী দেওয়া হচ্ছে। আর এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রসাদ দেওয়ার শেড ঘর তৈরী করা হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা সকলের সহযোহিতা কামনা করেছেন।
রাজভোগে আসেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম। তিনি বলেন,শুধু আজ নয়, এ মন্দিরে স্থানীয় সনাতন ধর্মবলম্বীরা লোকনাথ বাবার নামে প্রতি শুক্রবার রাজভোগ আয়োজন করে থাকে। রাজভোগে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ গ্রহণ করে। তাই প্রতি শুক্রবার মিলন মেলা পরিণত হয় লোকনাথ বাবার মন্দির। সেজন্য তার খুবই ভালো লাগে।
মন্দির পরিচালনার জন্য উজ্জ্বল চৌধুরী সভাপতি, কাজল শীল সাধারণ সম্পাদক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজল শীল, কমিটির সদস্য নারায়ন কর্মকার ও শংকর দাশের উদ্যোগে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চাঁদার টাকায় ২০১৫ সালে উপজেলা সাঁওতাল পাড়ায় এ মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে। মন্দির নির্মাণের জন্য ১ গন্ডা জায়গা দান করেন বিমল সাঁওতাল।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.