শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) ৫০তম সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েষ্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য ড.অমিত চাকমা। বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে (জিমনেসিয়াম মাঠ) অনুষ্ঠেয় এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে অমিত চাকমার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টির ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ঢাবির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার সমাবর্তনে ১৭ হাজার ৮৭৫ জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকে সনদ দেয়া হবে। এছাড়া ৮০ জনকে ৯৪টি স্বর্ণপদক, ৬১ জনকে পিএইচডি এবং ৪৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হবে। ড. অমিত চাকমাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
প্রফেসর ড. অমিত চাকমা কানাডার বিখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব ওয়েষ্টার্ন অন্টারিও’এর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে গৌরবান্তিত দায়িত্ব পালন করায় বিশ্বে উজ্জ্বল করেছেন বাংলাদেশের মুখ ও ভাবমূর্তি। বিশ্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বিরল সম্মানে। তিনি সত্যিই বাংলাদেশের গর্ব ও অহংকার।
ড. অমিত চাকমা বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছেন রাসায়নিক প্রকৌশলী হয়ে। বাংলাদেশের এই সূর্য্য সন্তান অমিত চাকমা বিশ্বে আজ সুখ্যাতির বিরল দৃষ্টান্ত। এবার তিনি যোগ দিচ্ছেন ৪ মার্চ (শনিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ৫০তম সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূদ প্রফেসর ড. অমিত চাকমার জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক চাকমা পরিবারে। জন্মস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলা শহরের পশ্চিম ট্রাইবেল আদমে। তার পিতা প্রভাত কুমার চাকমা ও মাতার নাম আলোরাণী চাকমা। তার নিকটাত্মীয় ও বনরূপা আদর্শ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা তালুকদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, ড. অমিত চাকমা বনরুপা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। এর পর তিনি রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উর্ত্তীর্ণ হন। পরে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে।
সূত্র জানায়,ড.অমিত চাকমার বাবা প্রভাত কুমার চাকমা ছিলেন সার্কেল অফিসার। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৮৭ সালে। মাতা আলোরাণী চাকমা এখনও বেঁচে আছেন। অমিত চাকমারা তিন ভাই ও এক বোন। সবার বড় তিনি। ছোট দুই ভাইয়ের একজন অরুনাভ চাকমা, থাকেন আমেরিকায়। একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আরেক ভাই স্মরণাভ চাকমা থাকেন টরন্টোতে। স্থানীয় একটি ফর্মাসিউসিটিক্যাল কোম্পানীর কর্মকর্তা । একমাত্র বোন হ্যাপি চাকমা ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ক্যান্সারে মারা যান।
অমিত চাকমা বিয়ে করেন ১৯৮৭ সালে। স্ত্রী মীনা চাকমা। তার বড় ছেলে জাস্টিন ক্যালিফোর্নিয়ায় চাকরী করেন। গত দুই এক বছর আগে জাস্টিন বিয়ে করেন।
জানা যায়, বাংলাদেশী রাসায়নিক প্রকৌশলী ড অমিত চাকমা কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েষ্টার্ন অন্টারিও’এর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর (উপাচার্য) নিযুক্ত হয়েছেন ২০০৯ সালের ১ জুলাই।
অমিত বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে আলজেরীয় সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান সেদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইন্সটিটিউট আলজেরিয়েন ডু পেট্রোল’এ। সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন ‘রাসায়নিক প্রকৌশল’ বিভাগে। ১৯৭৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কানাডায় চলে যান মাস্টার্স ও পিএইচডি অধ্যায়নের জন্য। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে লাভ করেন এমএএসসি এবং পিএইচডি ডিগ্রি।
এরপর ১৯৮৮-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারির রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপনা করার পর ১৯৯৬ সালেই চলে যান ইউনিভার্সিটি অব রেগিনাতে। সেখানে নিযুক্ত হন রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত রেগিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট রিসার্চ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে থাকার সময়ই অমিত স্থান করে নেন কানাডার ‘টপ ৪০ আন্ডার ৪০’তে। এরপর ২০০১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু’এর অ্যাকাডেমিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং প্রভোস্টের দায়িত্ব নেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিঅার.