চাকমা সার্কেল চীফ ও ব্লাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায় যারা নারীদের উপর যৌন নিযার্তন বা হয়রানি করে তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে এবং এ ধরনের কাজের জন্য সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন,সামাজিক সচেতনতা এবং সম্মিলিত সামাজিক প্রতিরোধই একমাত্র নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে পারে।
বুধবার রাঙামাটিতে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গণসচেতনতা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট(ব্লাস্ট) রাঙামাটির ইউনিটের আয়োজনে এবং ইউএনডিপি-সিএইডটিডিএফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্লাস্ট রাঙামাটি ইউনটের সমন্বয়কারী এডভোকেট জুয়েল দেওয়ান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ শামস্ উদ্দিন খালেদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা আন্দোলনের সভাপতি টুকু তালুকদার। সভার সঞ্চালনা করেন ব্লাস্টের সালিশ কর্মকর্তা মিজ রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা। সভায় ব্লাস্টের অন্যান্য কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন। অর্ধ দিবস ব্যাপী সভায় তৃণমুল পর্যায়ের পাড়া উন্নয়ন কমিটি ও পাড়া নারী উন্নয়ল দল অংশ নেন।
সভায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত থেকে এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ও ধর্ষনের বুকলেট এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন নিয়ে আলোচনা করেন।
নারী নেত্রী টুকু তালুকদার সাম্প্রতিক নারীর প্রতি সহিংসতার ও ঘটনা এবং কারনসমূহ জেন্ডার প্রেক্ষাপট পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্য রাজা দেবাশীষ রায় আরও বলেন, আদিবাসী সমাজে গণতান্ত্রিকতার চর্চ্চা থাকতে হবে। পরিবার, সমাজ এবং গ্রামের সবারই এ বোধ থেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনেক দায়িত্ব এসে বর্তায় যা আমাদের পালন করতে হবে। নারীদের উপর সহিংসতার অনেক ঘটনা অগোচরে থাকে এবং তা কখনো নথিভূর্ক্ত হয় না। যৌন হয়রানি এমন একটি বিষয় গৃহ থেকেই নারীদের শিকার হতে হয়। এর জন্য প্রতিরোধ করতে হবে সামাজিকভাবেই। মাদক দ্রব্যের অপব্যবহারেও নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, অনেক হেডম্যান কার্বারী এমনও বিচার করে থাকে যেখানে শাস্তির মাত্রায় বেত দিয়ে মারার কথা বলা হয়ে থাকে। প্রথাগত আদালতের কোন আইনেই এ ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়নি। তাই এধরনের বিষয় বা ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নিরূপা দেওয়ান বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ, মানবিকতা, লদ্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তা প্রতিরোধ এবং নারীদের আরও সতর্ক এবং সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিজ্ঞ বিচারক শামস্ উদ্দিন খালেদ তার বক্তব্যে বলেন, আদিবাসীদের মাঝে সৃষ্ট বিরোধগুলো প্রথাগত বিচার ব্যবস্থায় নিস্পত্তি হওয়ায় এখানে তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের মামলার সংখ্যা কম। তিনি আরও বলেন সরকারও জেলা আইনগত সহায়তা কমিট্রি মাধ্যমে বিনামূল্যে আইন সহায়তা দিয়ে থাকে- যারা অসহায় গরীব ন্যায় বিচার পাবার জন্য মামলা করতে বা লড়তে পারছেন না তাদের সরকার বিনামূল্যে আইন সহায়তা দিয়ে থাকে, উপজেলা পর্যায়ও লিগ্যাল এইড কমিটি রয়েছে যার মাধ্যমে এই সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, এ গণসচেতনার সভায় মূলত উদ্দেশ্য হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে ইউএনডিপির পরিচালিত তৃণমুল পর্যায়ের পাড়া উন্নয়ন কমিটি ও পাড়া নারী উন্নয়ল দল রয়েছে সেই সব সদস্যদের নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে/নিরসনে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় উদ্ধুদ্ধ ও সচেতনতা করা। যাতে সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সহিংসতা বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.