রাঙামাটির বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘ তিন বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সাধারন রোগী থেকে মুমুর্য রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, রাঙামাটি শহর থেকে বরকল উপজেলা সদরের দুরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী উপজেলা বরকলে ৫টি ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা ৫৩ হাজারের অধিক রয়েছে। এই উপজেলার সাথে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হলো নৌপথ। দুর্গম ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে একটি মাত্র সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। এতে উপজেলাবাসী পাহাড়-নদী বেয়ে একমাত্র চিকিৎসা নিতে আসেন বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু এই বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার অবস্থা খুবই নাজুক। রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও ঠিকমতো পায় না। অনেক সময় রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা না দিয়ে সরাসরি জেলা সদর হাসপাতালে অথবা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে থাকেন। যার কারণে রোগীরা বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তারপরও স্বজনরা রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য ছোট নৌকা অথবা দ্রæত যান ভাড়া করে নিয়ে যান হাসপাতালে। এরমধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারা যাত্রীবাহী দ্রæতযান (স্পিডবোট) ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তারা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে রোগীকে রাঙামাটি নিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে রাতের বেলায় রোগীদের বিপদে পড়তে হচ্ছে। তবে ২০১২ সালে মুমূর্ষু রোগীদের জরুরী পরিবহনের জন্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে একটি নৌ- অ্যাম্বুলেন্স উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগকে হস্তান্তর করে। এতে যাবতীয় অর্থ সহায়তা জাতি সংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একটি প্রকল্পের মাধ্যমে যোগান দেওয়া হতো। তবে পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নৌ-অ্যাম্বুলন্স চালকের বেতনও ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ হয়। ফলে মুমুর্য রোগীদের পরিবহনের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী রোগীর এক স্বজন প্রেম মালা চাকমা জানান, গত মাসে তার ছেলের বউ হঠাৎ অসুস্থ হয়। তৎনাৎ তাকে বরকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরনের পরামর্শ দেন। ওই দিন পকেটে এক টাকাও ছিল না। এক লোকের কাছ থেকে চার হাজার টাকা ধার নিয়ে স্পীড বোট ভাড়া করে রোগীকে নিয়ে যেতে হয়েছে।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক নতুন বিকাশ চাকমা জানান, ২০১৪ সালে রাঙামাটি জেলা পরিষদ কর্তৃক তাকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তার বেতন-ভাতা সবকিছু ইউএনডিপি অর্থায়নে চলতো। এরপর বছর যেতে না যেতে ইউএনডিপি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তার বেতন বন্ধ হয়। ফলে বর্তমানে বেকার রয়েছেন।
বরকল ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাত কুমার চাকমা জানান,জনগণের সেবার জন্য নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি জেলা পরিষদ দিয়েছে। রোগীদের সেবায় কাজে আসছে না সেটা তো দুঃখজনক।
বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মংক্যছিং সাগর জানান, যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় নৌ- অ্যাম্বুলেন্স রোগীর কাজে ব্যবহার হচ্ছে না। তাছাড়া সরকারিভাবে তেল ও চালকের জন্য কোনো বেতন বরাদ্দ নেই।
বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা জানান,নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সময়কালে জেলা পরিষদ থেকে বরকল উপজেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়। আর সবকিছু অর্থায়নে সহযোগিতা করতো ইউএনডিপি। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চালকের বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০১৫ সালে জেলা পরিষদ থেকে নৌ-অ্যাম্বলেন্সটি হস্তান্তর করা হলেও পরিষদের নিজস্ব আয় না নতুন করে চালক নিয়োগ দেওয়াও সম্ভব হয়নি। ফলে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে অচল রয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.