শুক্রবার খাগড়াছড়িতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী ও দৈনিক সমকালের পঞ্চম বারের মতো বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সম্পন্ন হয়েছে।
খাগড়াছড়ি ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’র ফুলেল চত্বরে সম্মিলিত জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পঞ্চম বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর প্রতিনিধি ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিট (আইআইইউসি)-এর ফার্মেসী বিভাগের ডীন অধ্যাপক ড. মীর আজাহার হোসেন এবং খাগড়াছড়ি ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ লে: কর্ণেল মনিরুজ্জামান খান জাতীয় পতাকা ও বিজ্ঞান একাডেমীর পতাকা উত্তোলন করেন।
এরপর শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে নির্ধারিত কক্ষগুলোতে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পরীক্ষায় শামিল হয়। পরীক্ষা গ্রহণ শেষে মধ্যদুপুরের পর থেকে শিক্ষকরা বিরতিহীনভাবে খাতাগুলো মুল্যায়ন এবং চুড়ান্ত ফলাফল তৈরী করা হয়।
বিকেলে আড়াইটা থেকে খাগড়াছড়ি ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’র অডিটোরিয়ামে শুরু হয় উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তরপর্ব এবং ফলাফল ঘোষণা ও সমাপনী সভা।
অধ্যক্ষ লে: কর্ণেল মনিরুজ্জামান খান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দেশের খ্যাতিমান শিক্ষক ড. মীর আজাহার হোসেন। এসময় ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পুলিশ লাইন্স হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার নাথ, খাগড়াছড়ি সরকারী হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক এ.এইচ.এম. মহসিন মিজান, নতুনকুঁড়ি ক্যান্ট: হাইস্কুলের শিক্ষক মো: মনিরুল ইসলাম, ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক যথাক্রমে নুরুল ইসলাম, জুলফিকার আলী এবং তারেক মনসুর।
অধ্যাপক খুরশীদুল আলমের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকাল’র খাগড়াছড়ির প্রতিনিধি প্রদীপ চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মীর আজাহার হোসেন বলেন, দুনিয়ার সাথে তাল মিলাতে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিযোগিতায় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে অধ্যবসায় করতে হবে। দূর্লভ মানব জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এখন থেকেই। কারণ জীবনকে অর্থবহ করতে হলে দেশকে-মাতাপিতা এবং নিজের সমাজকে ভালোবাসতে হবে।
তিনি চিকিৎসক-প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানী হবার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষ বড়ো হলে ছোটদের (দরিদ্র), দেশকে-সমাজকে ভুলে যান। একজন চিকিৎসকের দেশপ্রেমে জাতি সমৃদ্ধ-সবল প্রজন্ম পেতে পারে। একজন বিজ্ঞানীর ভুল সিদ্ধান্ত একটি ভবন বা সেতু ভেঙ্গে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রকৃত শিক্ষার পাশাপাশি উন্নত মুল্যবোধের প্রতিও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ লে: কর্ণেল মনিরুজ্জামান খান বলেন, মেধার কোন জাতপাত-স্থান-কাল-বৈষম্য নেই। ঢাকা বা চট্টগ্রামের একজন শিক্ষার্থী যেমন সিলিকনভ্যালী যাবার স্বপ্ন দেখতে পারে; তেমনি খাগড়াছড়ির একজন শিক্ষার্থীও তাই দেখতে পারে। কারণ প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষ দুনিয়াকে ছোট করে এনেছে।
তিনি বাংলাদেশ তথা উপ-মহাদেশের সংগ্রামী ঐতিহ্যের উদাহরণ টেনে বলেন, আলেক্সাজান্ডার বাহিনীকে এ মাটির মানুষ হাতি দিয়ে প্রতিরোধ করেছে। ড. রবিউল হোসেন আর আতাউল করিমের মতো বিজ্ঞানী বিশ্ব কাঁপাচ্ছে। আজকের শিক্ষার্থীরা যদি আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেদের শক্তির প্রকাশ ঘটায় তাহলে দেশ এগোবে অদম্য গতিতে।
উল্লেখ্য, সারা দেশের ৩০টি ভেন্যুতে পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়েছেন ‘ফার ইস্ট ইসলামী ব্যাংক’। মিডিয়া সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছে ‘এটিএন বাংলা’, ‘রেডিও ভূমি’, ‘দি নিউএইজ’ এবং ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম’।
এদিকে, স্কুল পর্যায়ে প্রথম থেকে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন খাগড়াছড়ি ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’র দশম শ্রেণীর ছাত্র জুবায়ের আল জাদি, আশরাফুল আলম, নতুনকুঁড়ি ক্যান্: হাইস্কুলের শিক্ষার্থী জুঁই বণিক, খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র মো: নজরুল ইসলাম এবং খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইন্স হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ওয়াসিম আকরাম।
কলেজ পর্যায়ে প্রথম থেকে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের নিকি চাকমা, খাগড়াছড়ি ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’র মুমু চাকমা ও তাহমিনা আকতার, খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ’র ছাত্রী নম্রতা চাকমা এবং খাগড়াছড়ি ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’র ছাত্র জেমস চাকমা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীর হাতে মেডেল, সনদপত্র এবং ব্যাজ পরিয়ে দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.