অবশেষে দীর্ঘ ১০ মাস পর সোমবার থেকে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেনী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শহরের তবলছড়ির শাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কার্যক্রম উদ্ধোধন করা হয়।
কড়া নিরাপত্তা ও কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সোমবার শহরের তবলছড়ি শাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ সালের শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম ব্যাচের ৭৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্বদ্যিালয় কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্ণেল মালেক সাম্স উদ্দিন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে কোন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন না।
এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃজ্ঞতা জানিয়ে নিয়মিত শ্রেনী কার্যক্রম চালু রাখা, সেশন জট কামনোর পাশাপাশি অবসান সংকট দূর ও শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানায়।
উদ্ধোধনী শুরুর আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে মিষ্টি মুখ করানো হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪-১৫ শিক্ষা বৎসরের ৭৩ জন শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বিভাগে ভর্তি হয়। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনৈতিক আপত্তির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগের সহ-সম্পাদক সজীব চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় প্রবল গণবিরোধিতাকে উপেক্ষা করে বিতর্কিত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরায় জোর করে শুরু করায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।
প্রেস বার্তায় দাবী করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষাকে বেহাল অবস্থায় রেখে, জুম্ম জনগণের অধিকার ও অস্তিত্বকে বিপন্ন করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়ে, সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে সরকার রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে চলেছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ পার্বত্যবাসী ও দেশের নাগরিক সমাজ বিরোধিতা করে আসছিল।
প্রেস বার্তায় আরও দাবী করা হয়,জনমতকে কোনরূপ তোয়াক্কা না করে বিতর্কিত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু করার ফলে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে আরেকটি সংঘাতের ক্ষেত্র পার্বত্যবাসীর উপর চাপিয়ে দিতে চলেছে। জনমতকে উপেক্ষা করে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী তথা রাষ্ট্রযন্ত্রের পেশীশক্তি দিয়ে জোর করে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সরকারের ফ্যাসীবাদী মানসিকতারই বহি:প্রকাশ বলে বিবেচনা করা যায়। ব্যাপক জনমতের বিপরীতে বিতর্কিত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু করার ফল কখনোই শুভ হতে পারে না।
প্রেস বার্তায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা এবং ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্সে এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া ৭৩ জন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের স্বার্থে তাদেরকে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় জনসংহতি সমিতি আপামর জনগণকে সাথে নিয়ে বিতর্কিত রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে প্রেস বার্তায় হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.