মঙ্গলবার রাঙামাটিতে আদিবাসী মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ও বর্তমান প্রেক্ষিত শীর্ষক কর্মশালার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, সরকার আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য গত বছর টার্গেট করলেও এখনো পর্ষন্ত তা শুরু করতে পারেনি। তাই সরকার আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য সদিচ্ছা রয়েছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার চালুর বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। বক্তারা আরও বলেন, বেরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে বিদ্যালয় স্থাপন করে বহুভাষিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে সে সব বিদ্যালয়ের পাঠদান ও শিক্ষার উপকরণ একই হওয়া উচিত। এবং এ জন্য একটি ফোরাম গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা গ্রীণহিল স্পীড প্রকল্পের আয়োজনে ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও শিক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অংসুইপ্রু চৌধুরী। গ্রীনহিলের প্রকল্প ব্যববস্থাপক যতন কুমার দেওয়ানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম, গ্রীনহিলের চেয়ারপার্সন টুকু তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রীণহিলের স্পীড প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়ক লাল ছোয়াক লিয়ানা পাংখোয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গ্রীনহিলের কনসালটেন্ট সুনীল কান্তি দে।
দিন ব্যাপী সেমিনারে জলার বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা শিক্ষক ও সাংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালার দ্বিতীয় অধিবেশনে মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহনকারীরা বিভিন্ন মতামত ও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন।
পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসীদের মার্তৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ও বর্তমান প্রেক্ষিত এবং ভবিষ্যৎ করনীয় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা তুলে ধরে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মংসানু চৌধুরী। তিনি তার প্রবন্ধে শিক্ষা বাজেটে সুনির্দিষ্ট কিছু অংশ আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ জরুরী,২০১৬ সালের জানুয়ারীর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে আদিবাসী ভাষায়র মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, আদিবাসী অধ্যূষিত অঞ্চলগুলোর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক অবস্থার আলোকে জাতীয়ভাবে গৃহীত আইন, নীতি ও কৌশলের সুপারিশগুলোকে স্থানীয় আকাংখার সাথে সমম্বিত করে বাস্তবায়ন করা, আদিবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন ও নীতি প্রনয়নে সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রনযন প্রক্রিয়ায় পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিলক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযক মন্ত্রনালয়কে সম্পৃক্ত করা, একটি ভাষানীতি প্রনয়ন করা যেখানে আদিবাসীদের মাতৃভাষার ব্যবহার ও এসব ভাষার উৎকর্ষ সাধনের জন্য করনীয় দিকগুলো উল্লেখ থাকবে, আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে অব্যাহত গবেষনা পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা এবং তার জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা, সরকারীভাবে শুরু করার ক্ষেত্রে কোন জটিলতা(আর্থিক জনবল ইতাদি) থাকলে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাকে পৃষ্ঠাপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে পাইণটিং শুরু করার জন্য করনীয় দিকগুলো তুলে ধরেন।
গ্রীনহীলের টুকু তালুকদার তার বক্তব্যে বেরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে বিদ্যালয় স্থাপন করে বহুভাষিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে সে সব বিদ্যালয়ের পাঠদান ও শিক্ষার উপকরণসহ এডভোকেসির জন্য একটি ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সরকারীভাবে বিদ্যালয়গুলো শিশুদের কাছে আকর্ষনীয় করে আবাসিক স্কুল নির্মাণ করতে হবে। শিশুরা খেলার ছলেই শিক্ষা গ্রহণ করতে শিক্ষকদের সহযোগিতা করতে হবে। তিনি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও সম্প্রদায় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেন। পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মার্তৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প গ্রহনে অনুরোধ জানান।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, জেলায় স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলো পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে মার্তৃভাষায় শিক্ষাদান কার্যক্রম গ্রহণ করলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ হতে সর্বাত্বক সহযোগীতা প্রদানের পাশাপাশি জাতীয় কমিটিতে সুপারিশ আকারে প্রেরণ করা হবে। তিনি বলেন, জেলা পরিষদের মাধ্যমেও জেলার বিভিন্ন সরকারী স্কুলে সম্প্রদায় অনুসারে মার্তৃভাষায় শিক্ষাদান কার্যক্রম গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারীভাবে মার্তৃভাষায় শিক্ষাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেটি স্থগিত রয়েছে। তিনি যে সমস্ত এনজিও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে সকলের সমন্বয়ে একটি ফোরাম ঘটনের মাধ্যমে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মার্তৃভাষায় শিক্ষাদান কার্যক্রম শুধু সভা সেমিনারে সীমাবদ্ধ না রেখে এটিকে বাস্তবায়ন করতের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.