২০১৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষর ফলাফলে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির ফলফল চিত্র সামগ্রিক বিবেচনায় ছিল হতাশাজনক। ২০১৪ সালের তুলনায় পরীক্ষায় পাশের হার জিপিএ-৫ প্রাপ্তি এবং শতভাগ উত্তীর্ন বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রতিটিতে পতন ঘটেছে এ জেলার ফলাফল চিত্রে। এ বছর এ জেলায় পাশের হার শতকরা ৭০ভাগ এবং জিপিএ প্রাপ্ত পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১২ জন। তবে বিদ্যালয় পর্যায়ে ফলাফল চিত্র আশাব্যঞ্জক না হলেও কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের আওতায় শতকরা ৮২ ভাগ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় পাশের হার শতকরা ৯২ ভাগ। কারিগরী বোর্ডে জেলার রাঙামাটি কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ১৮ জন এবং মাদ্রাসা পর্যায়ে ১০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। জেলার একমাত্র বিদ্যালয় হিসেবে বাঘাইছড় কাচালং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতভাগ পরিক্ষার্থী এবং মাদ্রাসা পর্যায়ে কাপ্তাই আল আমিন নূরিয়া মাদ্রাসা, বায়তুশ শরফ রাঙামাটি ও লংগদু মাদ্রাসার শতভাগ পরিক্ষার্থী উত্তীর্ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে জেলার ১০ টি উপজেলার ৬৬ টি বিদ্যালয় থেকে এ বছর মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৯৬৬ জন পরিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে এর মধ্যে কৃতকার্য হয় ৪১৬৬ জন এবং অকৃতকার্য ১৮০০ জন। অপর দিকে কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অর্ধনে জেলার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪৩৫ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য ৩৬৩ জন এবং অকৃতকার্য ৭২ জন। জেলার ১৩ টি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৫৩ জন । এর মধ্যে কৃতকার্য ৩২৪ জন এবং অকৃতকার্য ২৭ জন।
মাধ্যমিক পর্যায়ের উপজেলা ভিত্তিক ফলাফলে দেখা গেছে পাশের হারের দিক দিয়ে ভাল করেছে নানিয়ারচর উপজেলায়। যেখানে পাশের শতকরা হার ৯১ ভাগ। সব চাইতে খারাপ ফলাফল করেছে জুড়াছড়ি উপজেলায়। যেখানে পাশের হার মাত্র ৩১ ভাগ। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে বরবারের মতো এবারও এগিয়ে আছে কাপ্তাই উপজেলা যেখানে ৬০ জন জিপিএ৫ পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাঙামাটি সদর উপজেলার জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ৪১ জন। বিদ্যালয় ভিত্তিক সর্বোচ্চ সংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছে কাপ্তাই উপজেলার নৌবাহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৮ জন শিক্ষার্থী । এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেও রয়েছে কাপ্তাই কেপিএম উচ্চ বিদ্যালয় ১৮ জন এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাঙামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১৭ জন। ৪র্থ স্থানে রয়েছে লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ১ জন এবং ৫ম স্থানে রয়েছে কাপ্তাই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় ১১ জন। শতবছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭ জন এবং কাপ্তাই উপজেলার নারানগিরি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৫ জন। তবে নামকরা এ সব বিদ্যালয়ের তূলনায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে লংগদু রাবেতা উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন। এছাড়া বাাইছড়ি কাচালং মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। রাঙামাটি শহরের অপরাপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র শহীদ আব্দুল আলী একাডেমী থেকে মাত্র ১ জন জিপিএ-৫ পেলেও শহরতলীর অপরাপর বিদ্যালয়গুলো থেকে কোন পরিক্ষার্থ্ইী জিপিএ-৫ না পাওয়ায় বিষযটি সকলকে হতভাগ করেছে। তবে রাঙামাটি কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ১৮ জন শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়ার পাশাপাশি মাদ্রাসা পর্যায়ে কাপ্তাই আল-আমিন ইসলামিয়া মাদ্রাসার ৩ জন, কাচালং দাখিল মাদ্রাসার ৩ জন এবং লংগদু বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা থেকে ২ জন জিপিএ- ৫ পেয়েছে । রাঙামাটি সদরের ৩ টি মাদ্রাসার মধ্যে আল-আমিন মাদ্রাসার মাত্র ১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারের ফলাফলে শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ৫টি জেলা থেকে শ্রেষ্ঠ ২০ টি বিদ্যালয় এর তালিকা নির্নয় করা হলেও সেই তালিকায় স্থান পায়নি রাঙামাটির কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এমনকি মাধ্যমিক পর্যায়ের সার্বিক পাশের হার এবং চট্টগ্রাম বোর্ড পর্যায়ের পাশের হার কোনটিকে স্পর্শ করতে পারেনি রাঙামাটির ফলাফল । বরংশ বিগত ২০১৪ সালের তূলনায় শতকরা ১০ ভাগ পাশের হার হ্রাস এবং ২০ জন জিপিএ-৫ কম পাওয়ার চিত্র এ জেলার সার্বিক পরীক্ষার ফলাফল চিত্রকে হতাশাজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
কেন এই ফলাফল বিপর্যয়? এই প্রশ্নের জবাবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি হলেও মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষকের সংকট রয়েছে । তাছাড়া চলতি বছর পরীক্ষার সময় বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতাও পরিক্ষার্থীর ভাল ফলাফলে পথে অন্তরায়ের সৃষ্টি করেছে। বিষয় ভিত্তিক ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা সিংহভাগ পরীক্ষার্থী গণিতে এ-মাইনাস পেয়েছে। এর ফলে অন্যান্য বিষয়ে ভাল করার পরেও শুধুমাত্র গণিতের কারনে জিপিএ-৫ পওয়া সম্ভব হয়নি। গণিতের এই ফলাফল অনেক পরিক্ষার্থীকে চরমভাবে হতাশ করেছে।
তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে রাঙামাটি জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণী ভিত্তিক কাংখিত পাঠদান হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে পাঠ দানের চাইতে প্রাইভেট টিউশনি এবং বানিজ্যিক কোচিং এর প্রতি অধিক মনোনিবেশ করছেন। পাশাপাশি বছরের বড় একটা সময় জুড়ে শিক্ষ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষনের নামে উপজেলা থেকে জেলায় এবং জেলার বাইরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে । এর ফলে এই সব শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে অধিকাংশ ক্লাশ সমূহ কোন মতে পার করা হয়েছে। এজন্য এর প্রভাব পড়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল চিত্রে।
এদিকে রাঙামাটির জেলার মাধ্যমিক পর্যায়র এই ফলাফল চিত্রের উন্নয়নে এখন থেকে সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার আহবান জানিয়েছেন রাঙামাটির শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহল। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অতি মাত্রায় টিউশনির মানসিকতার অবসান ঘটিয়ে শ্রেণী কক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান , প্রশিক্ষনের নামে ঘন ঘন শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে এনে শ্রেণী পাঠদানের সমস্যা সৃষ্টি থেকে দূরে রাখা সর্বোপরি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিগুলোকে অধিকতর দয়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহল।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.