রাঙামাটিতে প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়া রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের প্রথম ৭ মাসে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেযে, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই পর্যন্ত এই জেলায় কোন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও অপ্রত্যাশিত ভাবে এই রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।
জেলার সীমান্তবর্তী ৪ টি উপজেলাকে ম্যালেরিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ন এলাকা ঘোষনা করে ওইসব উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রনে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারনের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে সম্পৃক্ত করে গৃহিত কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগকে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় হঠাৎ কওে ম্যালেরিয়া রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় এই রোগ নিয়ন্ত্রনে করনীয় শীর্ষক এক জরুরী সভায় শনিবার এই সব নির্দেশনা দেয়া হয়।
রাঙামাটি সিভিল সার্জনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ জরুরী সভায় স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের পরিচালক ( রোগ নিয়ন্ত্রন) প্রফেসর ডাঃ বেনজির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মুস্তাপিজুর রহমান এর সভাপতিত্বে এই সভায় রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. জাকির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফ উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ডাঃ নিলু কুমার তংচংগ্যা, জেলা আনসার ্ এ্যাডজুটেন্ড, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রন কর্মসূচীর কনসালট্যান্ট ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এয়াড়া রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ব্র্যাক ও হিল ফ্লাওয়ার এর কর্মকর্তা এবং বিজিবির প্রতিনিধি ও সাংবাদিক গন উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক জানান হঠাৎ কওে তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর । বিগত ২০০৮ সালে এই তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রন র্কমসূচী চালু হওয়ার পর ২০১৩ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রনে আশানুরুপ সফলতা আসলেও চলতি ২০১৪ সালের মে মাস হতে জুলাই মাস পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধির মাত্রা এতা বেশী যে বর্তমানে এটিকে মহামারী হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হঠাৎ কওে এই রোগের প্রাদুর্ভাব মহামারী আকারে পৌছানের কারন বের করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একাধিক টিম কাজ করছে।
জরুরী সভায় রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত এই জেলায় ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৭৮৪৮ জন। এর মধ্যে জেলার সীমান্তবর্তী ৪ টি উপজেলা বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪২৬ জন যা মোট আক্রান্তের হারের শতকরা প্রায় ৮২ ভাগ। আক্রান্তের এই হার গত বছরের তূলনায় দ্বিগুনের কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক জেলার এই ৪ টি ম্যালিয়া প্রবন উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সংশ্লিস্ট সকলকে সমন্বিত কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহন করে অতি দ্রুততার সাথে এই রোগের প্রার্দুভাব কমানোর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন এবং অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিমূহুর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করতে বলেন।
সভায় জেলা স্বাস্ত্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয় বর্তমানে ম্যালেরিয়া রোগ নিরুপনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে উপকরন থাকলেও ম্যালেরিয়া রোগের মজুদ আশানুরুপ পর্যায়ে নেই । জরুরী ভিত্তিতে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে পর্যাপ্ত পরিমান ঔষধ সংরক্ষনের উপর জোর দেয়া হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগে মাত্র ১০২৮ ডোজ ম্যালেরিয়ার ঔষধ আছে বলে জানানো হয়।
ম্যালেরিয়া রোগের মহামারী রুপে প্রার্দুভাবের সম্ভাব্য কারন হিসাবে সভায় জানানো হয় নির্ধারিত সময়ের আগে বৃষ্টি, ম্যালেরিয়ার জীবানুবাহী মশার প্রজনন বৃদ্ধি, ম্যালেরিয়ার মশা প্রতিরোধক মশারীর কার্যকরিতা হ্রাস এবং ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রনে থাকায় কর্মক্ষেত্রে কিছুটা শৈতিলতার কারনেকে দায়ী করা হয়। পাশাপাশি মশারীর যথার্থ ব্যবহার না হওয়ার বিষয়টিও সভায় আলোচিত হয়।
জরুরী সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক জানান গ্লোবাল ফান্ডের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রন কর্মসূচীর জন্য সাড়ে ৭ লক্ষ মশারী বিতরন করা হবে। এই ক্ষেত্রে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা সহ তিন পার্বত্য জেলার ম্যালেরিয়া প্রবন উপজেলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
সিভিল সার্জন জানান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার যে সমস্ত উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রার্দৃভাব বৃদ্ধি পেয়েছে সে সব উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি ব্র্যাক এবং হি ল ফ্লাওয়ার যেওথ ভাবে কাজ করছে এবং বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মেডিকেল টিম প্রেরন করে প্রত্যন্ত এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.