পাথরদস্যুতার কবলে পড়েছে লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পাথরদস্যুরা এখন বেপরোয়া।
স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বন বিভাগের বাধা উপেক্ষা করে চলছে রাতে দিনে পাথর উত্তোলন। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবীতে প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরে অভিযুক্তদের নামের তালিকা দিয়ে অভিযোগ করেছেন।
প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, বান্দরবান জেলার আলীকদমে মাতামুহুরী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনভূমির ওপর দিয়ে ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আলীকদম-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। এ বনাঞ্চলটি লামা বন বিভাগের আওতাভূক্ত। ১ লক্ষ ৩ হাজার একর আয়তনের বিশাল এ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের খাল ও ঝিরি থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ ঘনফুট পাথর উত্তোলনের চেষ্টা চলছে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে আলীকদম উপজেলায় কোন ঝিরি-খাল থেকে পাথর উত্তোলনের সরকারি অনুমতি নেই। আমার দপ্তর থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে গত ২ জানুয়ারি একটি পত্র দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে।
অভিযোগকারী পারাও ম্রো বলেন, বর্তমানে মাতামুহুরী রিজার্ভের ঠা-ার ঝিরি, ধুমচিখাল, বুঝিখাল, তুলাতলী, বাগান ঝিরি, মহেশখালী ঝিরি, ঠান্ডা ঝিরি, ক্রাইক্ষ্যং কলারঝিরি, বলির ঝিরি, কালাইয়ার ছড়া, কচুরছড়া, লাম্বু, বাম্বু ও ফুইট্টার ঝিরি থেকে নির্বিচারে পাথর আহরণ করা হচ্ছে। স্মারকলিপিতে দাবী করা হয়, আব্দুর পাথর উত্তোলনের কাজে জড়িত শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীরা একটি সরকারি সংস্থার মদতপুষ্ট।
অভিযুক্ত আবু মং মার্মা বলেন, তিনি রিজার্ভের বেশ কয়েকটি ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলেই তিনি পাথর তুলবেন। অপরদিকে, আবুল কালাম ঠিকাদার বলেন, তিনি রিজার্ভের বাইরে থেকে নানান উপায়ে পাথর সংগ্রহ করছেন। এসব পাথর সরকারি কাজে ব্যবহার হবে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো বলেন, নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করার কারণে এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতির ক্ষতি আশংকা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এসব নিয়ে স্মারকলিপি ও অভিযোগ পেশ করায় আমাকে একটি সংস্থার লোকজন গেল সপ্তাহে ডেকে নিয়ে হুমকী ও নাজেহাল করেছেন। এখন কোথাও অভিযোগ করার উল্টো অভিযোগকারীরাই হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
মাতামুহুরী রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার সামসুল হুদা বলেন, বিভিন্ন ঝিরি ও খাল থেকে পাথর উত্তোলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাথর শ্রমিক ও পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে বনকর্মীরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। হাতেনাতে পাথর শ্রমিক, ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহনে জড়িত গাড়ি পেলেই বন আইনে মামলা দেওয়া হবে।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বন আইন ১৯২৭ মতে পাথর হচ্ছে বনজ সম্পদ। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া যারা পাথর উত্তোলন করছে তাদেরকে হাতেনাতে ধরা গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোভাবেই সংরিক্ষত বনভূমি থেকে পাথর উত্তোলন করতে দিবে না বন বিভাগ।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.