পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখার বৃহস্পতিবার ২৪তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এতে সভাপতি পদে জিকো চাকমা, টিকেল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও রনেল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হল রুমে অনুষ্ঠিত সন্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। য়েছে। পিসিপি জেলা শাখার সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে , বিশেষ অতিথি ছিলেন পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু সিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন ও কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন পিসিজেএসএসের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, একটা জাতির একটি জনগোষ্ঠীর, গোটা বিশ্বের তথা একটি মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ হচ্ছে এই তরুণ সমাজ। দেশে দেশে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, সমস্ত অঞ্চলে এই তরুণ সমাজেরই জয়জয়কার। আজকের এই তরুণ সমাজের ওপরই নির্ভর করছে, এই অঞ্চলের, এই রাষ্ট্রের, এই দেশের তথা সমগ্র বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে যুব সমাজের ওপর। যুব সমাজ যেভাবে গড়ে ওঠে, যেদিকে ধাবিত হয়, সেই অঞ্চল, সেই জনগোষ্ঠী সেভাবেই ধাবিত হয়। আমাদের সমাজ অবশ্যই শ্রেণীবিভক্ত। এটাতো অনস্বীকার্য। আমাদের জুম্ম সমাজে বহু জাতি, এখানে জাতিগত বিভেদ আছে, বৈষম্য আছে, বিভেদ আছে। বিভেদ থাকলে দ্বন্দ্ব সংঘাত থাকবে। এখানে ধনী-গরিব আছে, এখানে অর্থনৈতিকগতভাবে বিভেদ আছে, নারী-পুরুষের বিভেদ আছে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন সমাজের রীতিনীতি, প্রথা রয়েছে। ফলে এখানে নানা ধরনের কৃত্রিমতা, নানা ধরণের বঞ্চনা, নানা ধরনের প্রতিকূলতা, সেটা রয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আজকে পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ছাড়াও অনেক জাতিগত ছাত্র সংগঠন রয়েছে। কিন্তু পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কোনো নির্দিষ্ট জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ পার্বত্য অঞ্চলের ১৩ ভাষাভাষী ১৪টি জাতিগোষ্ঠীর ছাত্র সমাজের তথা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু আমাদের পাহাড়ে শাসকগোষ্ঠীর কুপ্ররোচনায় বা বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার, সামন্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চরিত্রের কারনে, বিভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রশাসনিক বিভিন্ন বঞ্চনার কারনে এখানে জাতিগত ছাত্র সংগঠনসমূহ রয়েছে। আপনারা দেখবেন যে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জাতিগত ছাত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে। এটা অবশ্যই ভাবা দরকার। এটা খুবই খারাপ। কিন্তু এটা হচ্ছে বাস্তব। আমাদের সমাজের যে বাস্তবতা, আমরা যে বাস্তবতায় বসবাস করছি, সেই বাস্তবতার প্রতিফলনের হচ্ছে এগুলো। এগুলো যদি আমাদের জন্য ক্ষতিকারক হয়, জুম্ম জাতীয় ঐক্যের পথে যদি বাঁধা হয়, তাহলে ভালো দিক কোনটা? বর্তমান ছাত্র-যুব সমাজকে জেনে নিয়ে, বুঝে নিয়ে আমাদের ছাত্র সমাজকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে এবং এই দায়িত্বটা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কর্মীদের ওপরই বেশি বর্তায়।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জুম্ম জনগণের তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মধ্যে দিয়ে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল, সেই চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে কথা না বলার জন্য, সেই চুক্তি মানুষ যাতে ভুলতে পারে, ভুলে যেতে বাধ্য হয় এবং সেই প্রক্রিয়াই এখন পাহাড়ে চলছে। এই প্রক্রিয়াকে আজকের তরুণদের রুখে দিতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র-যুব সমাজকে সামিল হতে হবে।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রতিনিধি সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শ্যামা চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা। সভা পরিচালনা করেন পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ জিকো চাকমা।
আলোচনা সভা শেষে পরবর্তীতে জিকো চাকমাকে সভাপতি, টিকেল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও রনেল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্রী থোয়াইক্য জাই চাক।
--প্রেস বিজ্ঞপ্তি।