জেএসএস (সন্তু)-এর প্রতি অবিলম্বে খুন, সন্ত্রাস ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবিতে রোববার রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সাজেক নারী সমাজ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোনাদেবী চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি বঙ্গলতলী এলাকায় মানববেন্ধনে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য সূচনা চাকমা। সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট ও মাচলংয়ে পৃথক দুই স্থানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বাঘাইহাটের বালুঘাট এলাকায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রুপসা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উর্মিলা চাকমা। এছাড়া মাচলং-এ এলাকার পার্বত্য নারী সংঘের সদস্য রভিকা চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য অমিতা চাকমা। আরো বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য অনুপম চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিউটন চাকমা প্রমুখ।
অপরদিকে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখেন সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটির বাবুছড়া শাখার সম্পাদিকা ঊষা রানী চাকমা ও যুব সমাজের প্রতিনিধি সুভাষ চাকমা।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, মানববন্ধন কর্মসূচি বানচাল করে দিতে জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারীদের মোবাইলে কল করে হুমকি ও বাধা প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজনদের বাধা ও হুমকি প্রদান করা হয়েছে। তবে ব্যাপক বাধা ও হুমকি সত্ত্বেও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত করা হয়েছে।
এসব মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বক্তারা ইউপিডিএফের সাথে হওয়া সমঝোতার শর্ত ও সংঘাত বন্ধের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে জেএসএস সন্তু গ্রুপ কর্তৃক ১১ জুন থেকে নতুন করে ইউপিডিএফের ওপর হামলা ও পর পর দুই ইউপিডিএফ সদস্যকে খুনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদে তার গদি রক্ষার জন্য সরকারের সাথে ষড়যন্ত্র করে নতুন করে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত শুরু করেছেন। তিনি গদি রক্ষার জন্য নিজ দলের কর্মীদর বলি দিচ্ছেন, নিরীহ জনগণকে বলি দিচ্ছেন। এক কথায় তিনি অন্যের জীবন ও রক্ত দিয়ে তার গদি ঠিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সন্তু লারমার কারণে আজ সমগ্র জাতি ও জনগণ বিভক্ত হয়ে রয়েছে, ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না।
মানববন্ধনে বক্তারা সন্তু লারমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ভুল পথে হাঁটছেন, আপনার নিজের ও জনগণের স্বার্থে এই ভুল পথ পরিত্যাগ করুন। খুন, সন্ত্রাস ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের রাজনীতি বর্জন করুন। সরকারের দালালি বন্ধ করুন। আঞ্চলিক পরিষদের গদি ছেড়ে দিয়ে আন্দোলনের সাথে যুক্ত হোন।
জেএসএসের অন্যান্য নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে করে বক্তারা বলেন, ‘আপনারা আমাদের ভাই, আমরা বা ইউপিডিএফ আপনাদেরকে কখনই শত্রু মনে করি না। কিন্তু আপনাদেরকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এজন্য আপনারা অনেকে যারা বন্ধু তাদেরকে শত্রু মনে করছেন, আর যারা গণশত্রু তাদেরকে বন্ধু মনে করছেন। জাতির জন্য চরম ক্ষতিকর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতকে আন্দোলন বলে মনে করছেন। নিজের ভাইকে শত্রু মনে করছেন। কেবল একজনের জন্য আজ আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে এমন দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। তাই আপনাদের আত্মোপলব্ধি করতে হবে, সবকিছু সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে, সবকিছু অন্ধভাবে মেনে নেবেন না। উপরিস্থদের নির্দেশ জাতির জন্য ক্ষতিকর হলে তা মেনে নেবেন না। নিজের ভাইকে হত্যার নির্দেশ মেনে নেবেন না। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জারি রাখার বা জিইয়ে রাখার ফরমান মানবেন না। মনে রাখবেন জাতির চাইতে একজন ব্যক্তিনেতা কখনই বড় হতে পারে না’।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সন্তু লারমার ষড়যন্ত্র কখনই সফল হতে দেবো না। আমরা তার জাতি বিধ্বংসী অপতৎপরতা রুখবই। আমরা তার খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতিকে পরাস্ত করবই। কারণ আমাদের জাতি ও জনগণকে বাঁচাতে হবে। সন্তু লারমার মতো এক দালালের কাছে গোটা জাতি ও জনগণ চিরকাল জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।
--প্রেস বিজ্ঞপ্তি।