পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার সময়সূচি ভিত্তিক কার্যকর পরিকল্পনা না নিয়ে থাকলে আগামী ১মে থেকে অসহযোগ আন্দোলনের আবারও হুমকি দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারামা(সন্তু লারমা)।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চুক্তির ধারা মোতাবেক জেলা পরিষদ আইন ও প্রথাগত আইনকে তোয়াক্কা না করে অবাধে ভূমি বেদখল,সীমান্ত রক্ষার নামে বিজিবি ক্যাম্প সম্প্রসারনসহ নানাভাবে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের সরকারের যথেষ্ট পরিকল্পনা গ্রহন করার কথা বলে চুক্তি বাস্তবায়নের সময়সীমা নষ্ট করছে তা ১৭ বছরে প্রমাণ হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এর মধ্যে যদি সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ কার্যকর কর্মপরিকল্পনা না করে তাহলে ১ মে থেকে আত্ত্বনিয়ন্ত্রনাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে অসহযোগ আন্দোলনের চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন তিনি।
শুক্রবার বান্দরবানের পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) জেলা শাখার ১৬তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শৈল প্রপাতের পার্শ¦বর্তী ফারুক পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি বান্দরবান শাখার সভাপতি মংস্তু মারমা। বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও জেএসএস বান্দরবান শাখার সভাপতি সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং, লয়েল ডেভিড বম, জেএসএসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিমান ত্রিপুরা, পিসিসি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যোতিষ্মান চাকমা, নারী নেত্রী ওয়াইচিং মার্মা প্রমুখ। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।
সন্মেলন শুরুর আগে কমিউনিটি হল প্রাঙ্গনে সন্তু লারমা জাতীয় পতাকা ও জেলার সভাপতি পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
সন্তু লারমা অভিযোগ করে বলেন,পার্বত্য এলাকায় অপারেশন উত্তরণের নামে সেনা শাসন অব্যহত রাখা, সরকারীভাবে বনায়নের নামে ভূমি অধিগ্রহন, সেটেলার বাঙ্গালীদের অনুপ্রবেশের সহায়তা করে আদিবাসীদের ভূমি জোড় জবরদস্তি দখল, অগ্নিসংযোগ, আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ, মানবতা বিরোধী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর মদতে সম্পাদন হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে সেনা শাসন চলছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখনো সেনা কর্তৃত্ব রয়ে গেছে। এখনো অপারেশন উত্তোরণ চলছে। সামরিক শাসনের মধ্যে উপনিবেশ হিসেবে বসবাস করছি। সীমান্ত রক্ষার নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের প্রচেষ্টা চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সন্তু লারমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সম্মেলনে আমাদের অনুভূতি জানাতে এসেছিলাম। সেখানেও বাধা প্রদান করছে। হামলা করে আহত করছে নিরীহ মানুষদের। আমরা সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই। একটি নিরাপদ জীবন পেতে চুক্তি করেছি। সরকার বলছে চুক্তির বেশির ভাগ শর্ত বাস্তবায়ন করেছে। কিছু বাকী আছে। আসলে এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। প্রকৃত পক্ষে চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়গুলো সরকার যেনতেনভাবে সময় পার করতে চাচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়গুলো সরকার যেনতেনভাবে সময় পার করতে চাচ্ছে। যাতে করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়া যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে জিয়াউর রহমান সমতল এলাকা থেকে মানুষ ধরে এনে পার্বত্য অঞ্চলে বসিয়ে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করেছে। সেটি এখনো চলমান রয়েছে। সাম্প্রদায়িক উগ্র মানসিকতার মানুষেরা বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় হাজার হাজার একর জমি বেদখল করেছে রাবার ও ফল বাগানের নামে। এ দখল প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভূমি দস্যুদের জমি দখল ও আক্রমণের ভয়ে নিরীহ অনেক লোক পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো অনেক পাহাড়ি পরিবার তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে মায়ানমারে আশ্রয় নিচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.