জাতীয় সংসদে উত্থাপিত রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৪ বিলের তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ২৯৯নং সংসদীয় আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের গণমানুষের ক্ষোভ ও মনের দুঃখের কথা উপলদ্ধি করে উত্থাপিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন বিল স্থগিতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি,পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ আইনকে লংঘন করে এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে পরিষদের এই বিল জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রনয়ন করে অবিলম্বে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। মঙ্গলবার রাত ৯টায় রাঙামাটি শহরের কালিন্দীপুরস্থ বিজন সারনীর সাংসদের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরী এক সংবাদ সন্মেলনে সাংসদ উষাতন তালুকদার ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, জনসংহতি সমিতির নেতা কেএস মং মারমা ও জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সভাপতি গুনেন্দু বিকাশ চাকমা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সন্মেলনে উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক কোন আইন করতে গেলে অবশ্যই পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা বা মতামত নিতে হবে। কিন্তু কোনটাই করা হয়নি। সরকার আইন করে তা আবার লংঘন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর জাতীয় সংসদে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সংশোধনী আইন কিভাবে উপস্থাপন করলেন? তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পার্বত্যবাসীর প্রতি যথেষ্ট আর্ন্তরিকতা রয়েছে। এবং পার্বত্যবাসীরও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। তাই আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী পার্বত্যবাসীর মনোভাব, অনুভুতিকে অনুধাবন ও উপলদ্ধি করে উত্থাপিত বিলটি যতক্ষন না পর্ষন্ত আইনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা না হয়। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা পার্বত্যাঞ্চলের মহৎ আশা ও উদ্দেশ্য নিয়ে যে পার্বত্য চুক্তি করেছেন তা যেন ভুন্ঠুল না হয় তার আহ্বান জানিয়ে সাংসদ উষাতন তালুকদার আরও বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ এমনিতে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসবাস ও তাদের জীবনকে অতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছে। এমননি সময়ে আরও অধিকতরভাবে এভাবে যদি সরকারী তরফ থেকে অর্থাৎ পার্বত্য প্রতিন্ত্রী বীর বাহাদুরের পক্ষ থেকে এভাবে যদি অগ্রসর হয়ে থাকে তাহলে সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক ও আনাকাংখিত। আশাকরি এ অঞ্চলের মানুষের মনেরভাবকে উপলদ্ধি করে প্রধানমন্ত্রী এই বিল স্থগিত করবেন। আইন অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা না করে এই বিল উত্থাপিত করায় পার্বত্যবাসী অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়েছে উল্লেখ জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার এমপি বলেন,পার্বত্যবাসী অত্যন্ত আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তিকে লংঘন এবং আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তাই এসব উপেক্ষার পরও এ অঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েেছে। কারন এ উদ্যোগ কোন সরকারের বিরুদ্ধে ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য। তিনি বলেন, তৃতীয় কোন পক্ষের সমঝোতা ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে পার্বত্যবাসীর পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তৃতীয় পক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে কোন দেশেই চুক্তি হয়নি। এরপর জনসংহতি সমিতির সকল সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। তারা কোথাও একটা বুলেট রেখে আসেননি। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা ১৭ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করে অবহেলা ও বঞ্চনা করে চলেছে। এ অঞ্চলের মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। যা মোটেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি করেছি অত্যন্ত পবিত্র মন নিয়ে। দেশের সার্বভৌমত্ব স্বাধীনতাকে স্বীকার করে। এ অঞ্চলের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চাই এবং সম-অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের নিয়ে খেলা খেলাটা মোটেই পছন্দনীয় নয়। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,জনগনের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং পার্বত্য চুক্তি লংঘন করে সরকার যদি জাতীয় সংসদে পার্বত্য জেলা পরিষদ সংশোধনী আইন বিল পাস করে থাকে তা হলে পরবর্তী সময়ই বলে দেবে পরিস্থিতি কোন দিকে ধাবিত হবে।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.