রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেকে শুক্রবার পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুবফোরাম(ডিওয়াইএফ) সাজেক শাখার যৌথ কাউন্সিলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের ভালো মন্দের তোয়াক্কা করে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। যদি থাকতো তবে সেনা শাসন জারি থাকতো না, সেনাবাহিনী বিজিবির প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহায়তায় ভুমি বেদখল করা হতো না। এদিকে কাউন্সিলের মাধ্যমে রিপন জ্যোতি চাকমাকে সভাপতি ও বেবিলন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সাজেক শাখার ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন এবং সুপন চাকমাকে সভাপতি ও অনুপম চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের গণতান্ত্রিক যুবফোরাম সাজেক শাখা কমিটি গঠনের ঘোষনা করা হয়েছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সাজেক থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক বেবিলন চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার ’নিপীড়ন নির্যাতন ও ভুমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সাজেকের উজো বাজারে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুবফোরাম সাজেক থানা শাখার সভাপতি সুপন চাকমা। বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) সাজেক ইউনিটের সমন্বয়ক মিঠুন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্র্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রিটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরাম বাঘাইছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় চাকমা, সাজেক ভুমিরক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরুপা চাকমা প্রমুখ। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন, গণতান্ত্রিক যুবফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য রিপন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি বিপুল চাকমা, কেন্দ্রীয় সদস্য রতন চাকমা, বিলাস কার্বারী, হৃদয়রঞ্জন মেম্বার, চিত্তরঞ্জন কার্বারী, নির্মল কার্বারী, গঙ্গারাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ চাকমা প্রমুখ। সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডিওয়াইএফ সাজেক থানা শাখার সহসভাপতি জেনেল চাকমা। কাউন্সিল উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত সভার প্রথমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ যাবৎ যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন চন্দ্রলক্ষী চাকমা। আলোচনা সভা শেষে রিপন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সাজেক শাখার ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠনের ঘোষনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য রিটন চাকমা। এছাড়া ২১ সদস্যের গণতান্ত্রিক যুবফোরাম সাজেক শাখা কমিটি গঠনের ঘোষনা দেন গণতান্ত্রিক যুবফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জিকো ত্রিপুরা। সভায় নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকার পার্বত্য জুম্ম জনগণকে সবদিক থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জাতিসত্তার পরিচয় পর্যন্ত সরকার মুছে দিয়েছে। সরকার নানা উপায়ে জুম্ম ধ্বংসের নীলনক্সা কার্যকর করে যাচ্ছে। পার্বত্য জনগণ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের প্রতিনিধিদের উপর রাঙামাটিতে হামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যারা পার্বত্য জুম্ম জনগণের পক্ষে কথা বলতে চায় তাদেরও নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখিন। নেতৃবৃন্দ বলেন, সাজেক এলাকার জনগণ পুলিশ থানা স্থাপনে সম্মত ছিলো না। কিন্তু সরকার জনমতকে তোয়াক্কা না করে থানা স্থাপন করেছে। আমরা অধিকার হারা নিপীড়িত নির্যাতিত। আমাদের পর্যটনের আগে দরকার রাজনৈতিক অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন। সাজেকের জুম্ম জনগণ ২০০৭-২০০৮ ও ২০১০ সালে ভূমি বেদখল ও নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম করে সাজেকবাসী ভূমি বেদখল প্রতিরোধ করেছে। বক্তারা অভিযোগ করেন এখনো বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে ভূমি বেদখলের প্রচেষ্টা চলছে। ভূমি বেদখলের যেকোনো চক্রান্ত সাজেকের জনগণ প্রতিরোধ করবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.