পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে গ্রেনেড হামলা কেবল আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিষ্ঠানের উপর নয়,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার উপর, চুক্তি বাস্তবায়নগামী গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং জনস্বার্থের উপর হামলার শামিল। এ হামলা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও চুক্তি বাস্তবায়ন বিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। মঙ্গলবার সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার বিভাগের সম্পাদক সজীব চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ের আনুমানিক ৩০ থেকে ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, নিরাপত্তাবাহিনীর পোষ্ট, সোনালী ব্যাংক,নিরাপত্তা বাহিনীর জলযানঘাটের সেন্ট্রিপোস্ট এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যালয় রয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও নিরাপত্তার চৌকির মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয়ে এই সন্ত্রাসী গ্রেনেড হামলা হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও দু:খজনক। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এই পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সোমবার ভোর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে সুশীল চাকমা নামে ইউপিডিএফের এক সন্ত্রাসী সদস্য আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ের উত্তরদিকের প্রাঙ্গণে গ্রেনেডটি নিক্ষেপ করে। বিস্ফোরিত গ্রেনেডের আঘাতে আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে রাখা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায় এবং একটি চাকা ফুটো হয়। এছাড়া আরও তিনটি গাড়ি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ের দেয়ালে একাধিক আঘাতের চিহ্ন সৃষ্টি হয়। হামলায় তাকে সহযোগিতার জন্য পাহাড়ি-বাঙালি আরও ৩ জন লোক নিয়োজিত ছিল। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১২ সালের ২০মে রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুরে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে একজন ছাত্র নিহত ও অন্তত ১৩ জন ছাত্র গুরুতর আহত হয়। ইউপিডিএফ ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ২০১৩সালের ১৭ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক পাপুল বিকাশ চাকমাকে ও গত বছর ২ সেপ্টেম্বর প্রমেশ চাকমা নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন সময়ে রাঙামাটি সদর এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের নাকের ডগা থেকে অনেক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে আসছে। বর্তমানে তারা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকা এবং রাঙামাটির নানিয়ারচর, কুতুকছড়ি ও বাঘাইছড়ি এলাকায় জনগণের উপর খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বারবার দাবি সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উপরোক্ত কোন ঘটনার দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। ফলে প্রশাসনের নাকের ডগায়ই ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে। গ্রেনেড হামলা ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ী করে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে যথাযথ ও নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক অবিলম্বে প্রকৃত হামলাকারী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণসহ অচিরেই ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.