খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার মাতৃভাষা ভিত্তিক কোনো স্কুল নেই। ফলে উপজেলার হাজার হাজার আদিবাসী শিশু মাতৃভাষায় পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেভ দি চিলড্রেন(ইউকে)র সহায়তায় খাগড়াছড়ির বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং কল্যান সমিতি উদ্যোগে ২০০৭থেকে পানছড়িতে ৪০টি মাতৃভাষায় ভিত্তিক স্কুল চালু ছিল । দাতা সংস্থার অসহযোগিতার কারণে গত ডিসেম্বন ২০১৩ সালে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাই নিজস্ব বর্ণমালায়, মাতৃভাষায় লেখাপড়া শেখার আগ্রহ থাকার সত্বেও আদিবাসী শিশুরা নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জাবারাং কল্যান সমিতি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পানছড়ি উপজেলায় মাতৃভাষা ভিত্তিক ৪০ টি স্কুল ছিল। এর মধ্যে চাকমা ভাষায় প্রি-প্রাইমারী স্কুল ১৮টি, ক্রিপুরা ভাষায় ১১টি, কমিউনিটি লারনিং স্কুল ১১ টি স্কুল ছিল।সে সময় প্রায় কয়েক হাজার শিশু নিজস্ব বর্ণমালায়, মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।
অভিভাবকরা অনেকটা আগ্রহ করে শিশুদের স্কুলে পাঠায়। নিজের ভাষায় প্রথম পাঠ শিখলে শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ বাড়ে । ভয়, জড়তা থাকে না। খেলার মাধ্যমে শিখতে পারে বলে শিখনও দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেশী থাকে। বাসায় দুষ্টামিও কম করে থাকে।
অভিভাবক আপেলি চাকমা বলেন, সন্তানকে প্রথমে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দিতে পেরে আমি খুব খুশি তখন স্কুলগুলো চালু ছিল। আমি নিজেও চাঙমা ভাষায় লিখতে, পড়তে পারি না। এখন আমার মেয়ে চাঙমা ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারে। এতে আমি খুব খুশি। তিনি আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় লেখা-পড়ার সুযোগ করার জন্য সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
শিক্ষিকা ইন্দু বালা চাকমা বলেন, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিশুদের শেখাতে আমার খুব ভালো লাগে। বুকের দুধ খায় এমন শিশুরাও এ স্কুলে আসে। মাতৃভাষায় তারা খুব সহজেই পড়া আয়ত্বে নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে তাদেরকে মাতৃভাষায় আর কে-২ শিক্ষার্থীদের শেষ ৬ মাস বাংলা ভাষায় পাঠদান দেওয়া হয়। যেন তারা প্রাইমারী স্কুলে দিয়ে বাংলা ভাযায় পড়া আয়ত্বে নিতে পারে। মাতৃভাষায় শেখা শিশুরা শিশুর চারিরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশ, সামাজিক ও আবেগিক বিকাশ সম্পর্কে শিক্ষা পায়। তাই আবারও মাতৃভাষা স্কুলগুলো চালু করার দাবি জানান তিনি।
জাবারাং কল্যান সমিতির শিক্ষা প্রোগামের সে সমসয়ের প্রকল্প সমন্বয়ক বিনোদন ত্রিপুরা বলেন, পানছড়ি উপজেলায় ৪০টি মাতৃভাষাভিত্তিক প্রাক- প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদেরকে মাতৃভাষায় প্রথম পাঠ দেওয়ার জন্য জাবারাং কল্যান সমিতির উদ্যোগে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা এই তিনটি জাতিগোষ্ঠি শিশুদের জন্য চাকমা, মারমা, ককবরক ভাষা সম্বলিত পাঠ্য বই ও উপকরন তৈরী করেছি। এসব পাঠ্য বই ও মাতৃভাষার উপর শিক্ষিকারা খেলার ছলে পাঠদান দিয়েছি।এখন আর সে সুযোগ পাচ্ছি না।তাই খুব খারাপ লাগছে।
পানছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিটি শিশুকে মাতৃভাষায় প্রথম পাঠ দেওয়া দরকার। মাতৃভাষায় সহজে শিশুরা মনে রাখতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। মাতৃভাষায় শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রমের ফলে শিশুদের ভয়, জড়তা কমে যায়। ঝড়ে পড়ার হার থাকে না। শিশুরা বিদ্যালয় মূখী হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.