রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটির জুরাছড়িতে আরো দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় ১১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। শনিবার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ শিং এমপি ও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিয়ারিং কোরের কমান্ডার মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান।
উল্লেখ্য, গেল মঙ্গলবার ভারী বর্ষনে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে দুই সেনা কর্মকর্তা ও ৩ সেনা সদস্যসহ ১১২ জন মারা যান। এর মধ্যে এর মধ্যে রাঙামাটি সদর উপজেলায় ৬৩ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, জুরাছড়ি ৬ জন ও বিলাইছড়ি ২ জন রয়েছেন। পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি শহরে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২১শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, গেল শুক্রবার বিকালে জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের আদিয়াকছড়া এলাকা থেকে পাহাড়ী ঢলে ভেসে আসা চিয়ং চাকমা(১৮),পিতা রজনী মোহন চাকমা,কান্দারা ছড়া এবং চিবে চোগা চাকমা(১৭) পিতা বীর বাহু চাকমা,আদিয়াকছড়ার পানি থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুমদুম্যা ইউপির চেয়ারম্যান শান্তি রাজ চাকমা উদ্ধারের নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে শনিবার পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে আশ্রিত ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিমন্ত্রী বাহাদুর উশৈ শিং বীর এমপি। এসময় তিনি প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সহায়তার জন্য দির্শেনা প্রদান করেন। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রতিমন্ত্রী জেলা প্রশাসন সন্মেল কক্ষে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
সভায় পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আাগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রী পরিষদ সভায় তিনি তিন পার্বত্য জেলায় বিরাজিত অবস্থা সািবস্তারে তুলে ধরবেন। তার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী পার্বত্যবাসীদেও দুর্ভোগ লাগবে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহন করবেন। তিনি এসভায় রাঙামাটি দুর্যোগ ব্যবস্থাকে কাটিয়ে উঠার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান। সভায় সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। সভায় জেলা প্রশাসক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আশ্রয় শিবিরে আশ্রিতদেও ত্রাণ বিতরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরো বলেন,সরকারী ত্রাণের পাশাপাশি যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থ্রান প্রদানের অংশ গ্রহন করতে চান তাহলে তাদের ত্রাণ সামগ্রি বা নগদ অর্থ জেলা প্রশাসকের কাছে অবশ্যই হস্তান্তর করতে হবে।
অপরদিকে, সেনাবাহিনী ইঞ্জিজিয়ারিং কোরের কমান্ডার মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান ও চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার দুর্গত এলাকা ও ক্ষতিগ্রস্থ আশ্রিত স্থানে পরিদর্শন করেছেন। এসময় সাংবাদিকদের ভারী বর্ষনের কারণে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ৪৫টি পয়েন্টে রাস্তা ব্লক হয়েছে উল্লেখ কওে বলেন, ইতোমধ্যে অনেক স্থানে ব্লক হয়েছে সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। তবে একটা জায়গায় দেড়শ ফুট রাস্তা ধস হয়েছে। সেগুলো সেনাবাহিনী ও সড়ক জনপথ বিভাগ মিলে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী তিন দিনের মধ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের হালকা যানবাহন চলাচল করা সম্ভব হবে। এছাড়া পুরোপুরি যানবাহন চলাচল করতে একমাস সময় লাগতে পারে।
এদিকে, রোববার রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে আসছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার কথা রয়েছে। জেলা বিএনপির শাহ আলম নিশ্চিত করে বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক পথে হয়ে শালবাগানের ভেঙ্গে পড়া রাস্তা পর্ষন্ত আসবেন। এরপর তিনি পায়ে হেটে এসে শহরের শিমুলতলী ও ভেদভেদী এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করবেন এবং দুপুরের দিকে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলন করবেন।
কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা বৃদ্ধিঃ
ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে কাপ্তাই বাধের ১৬টি স্পিলওয়ে থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৯হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে। বর্তমানে হ্রদেও উচ্চতা রয়েছে ১০৪ মীন সি লেভেল। থাকার কথা ছিল ৮০ মীন সি লেভেল। বর্তমানে ৩টি ইউনিট থেকে ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যূৎ উৎপাদস হচ্ছে বলে কাপ্তাই বিদ্যূৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোঃ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.