রাঙামাটির বরকল উপজেলার ৪নং ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদকে অকার্যকর ঘোষণা করে অর্ন্তবতী কালীন প্রশাসনিক কমিটি গঠন করে ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দাবী জানিয়েছেন ইউনিয়নের হেডম্যান,কার্বারী ও স্থানীয় লোকজন।
গেল ১৮ জানুয়ারী ১২৬ জনের স্বাক্ষরিত লিখিত দাবী নামা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার সুমনী আক্তারের কাছে প্রদান করেন। এছাড়াও লিখিত দাবীনামা পত্রটি আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান, ২৯৯নং পার্বত্য রাঙামাটির আসনের সাংসদ,জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়েছে।
লিখিত দাবী নামায় বলা হয়, গেল ২০১৬ সালের ৬ষ্ঠ ধাপে বরকল উপজেলার ৪নং ভূষণছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছোটহরিণা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছোট চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুন তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। ভোট দিতে আসা লাইনে দাড়িঁয়ে থাকা ভোটারদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে এতে অনেকেই মারাত্মক ভাবে আহত হন। তাই জীবনের ভয়ে পালিয়ে গেলে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। ওই কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী দিলিপ কুমার চাকমা প্রিসাইডিং অফিসার রির্টার্নিং অফিসার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে ওই কেন্দ্রে পূনঃ নির্বাচনের লিখিত আবেদন করেন। লিখিত আবেদনের পর তিনি হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট করেন। হাইকোর্টের দুজন বিজ্ঞ বিচারপতি মোঃ জুবায়ার রহমান ও মোঃ খসরুজ্জামানের বেঞ্চ দু সপ্তাহের মধ্যে ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের অনিয়মের অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ প্রদান করেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন থেকে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাতেন-কে দায়িত্ব দেয়া হয়।
গেল ২০১৬ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন ছোটহরিণা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। ঘটনার শিকার ব্যাক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে লিখিত জবাব নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই তদন্তে প্রকৃত সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে এবং আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন এ প্রত্যাশা ছিল ভূষণছড়া ইউনিয়নবাসীর। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শণ করে সম্পূর্ন অন্যায় ও বেআইনী ভাবে গেজেট প্রকাশ করে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে অন্যায়কারী ব্যাক্তির স্বার্থ রক্ষার কাজ করছে বলে অভিযোগ করছেন ইউনিয়নের হেডম্যান কাবার্রী ও সুশীল সমাজ।
এ ব্যাপারে ১৪৮নং ভূষণছড়া মৌজার হেডম্যান তাপস দেওয়ান ও ১৫৮নং মাউদং মৌজার হেডম্যান দীপেন দেওয়ান টিটু ও কার্বারী রতœসেন চাকমা জানান, ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদটি বর্তমানে অকার্যকর পরিষদে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুনও অবৈধ চেয়ারম্যান। তারা আরো অভিযোগ করেন,ভুষণছড়া ইউনিয়নের ছোটহরিণা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুনের নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনী কেন্দ্র দখল করে পোলিং এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ভোটারদের মারধোর ভোট প্রদানে বাধা, ভোট জালিয়াতি এসব ব্যাপারে হাইকোটে মামলা করেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী দিলিপ কুমার চাকমা। সেই মামলা নিষ্পত্তি না হয়ে গেল ১০ নভেম্বর ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বারদের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। গেজেট প্রকাশের পর গেল ২৮ নভেম্বর ৫জন মেম্বার উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার সুমনী আক্তারের কাছে শপথ গ্রহন করেন। কিন্তু ইউনিয়নের বাকি ৭জন মেম্বার ওই শপথ প্রত্যাখান করেন। এর পর গেল ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আইনকে তোয়াক্কা না করে একতরফা ভাবে চেয়ারম্যান প্রতিদ্ধন্ধী প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুনের নামে গেজেট প্রদান করেন। ১২ ডিসেম্বর জেলা প্শরশাসক তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
হেডম্যান,কার্বারীদের আরো অভিযোগ করে বলেন,ইউনিয়ন পরিষদ আইন ও বিধিমালা ২০০৯ এর ২৯ ধারার (৪) উপধারায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত তিন- চর্তুথাংশ সদস্য শপথ গ্রহন করিলে সেই ইউনিয়নটি যথাযথভাবে গঠিত হয়েছে বলে গন্য হবে। কিন্তু ওই ইউনিয়নের ৭জন সদস্য শপথ গ্রহন না করায় আইনগতভাবে ওই ইউনিয়ন পরিষদটি অকার্যকর হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের আইন ও বিধি অনুযায়ী চেয়ারম্যান শপথ গ্রহন করার পর এক মাসের মধ্যে তিন চতুর্থাংশ সদস্যর উপস্থিতিতে প্রথম সভা করতে হবে। কিন্তু ৭জন সদস্য শপথ না করায় ওই সভাটি করা সম্ভব হয়নি। ফলে আইনগতভাবে পরিষদটি যেমনি অকার্যকর হয়েছে তাহলে চেয়ারম্যান কিভাবে বৈধ হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাই অকার্যকর ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের অর্ন্তবর্তীকালীন প্রশাসনিক কমিটি গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনার দাবী তাদের।
বরকল উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) সুমনী আক্তার একটি লিখিত দাবীনামা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান,এ ব্যাপারে ইউএনও’র কোন কিছু করার নেই।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন,ভূষণছড়া ইউনিয়নটির ব্যাপারে মামলা ছিল। তা নিষ্পত্তি হয়ে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। সেই অনুযায়ী চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন শপথ গ্রহন করেছেন। তিনি এখন ইউনিয়নের বৈধ চেয়ারম্যান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.