খাগড়াছড়িতে কয়েকটি সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে উড়ো চিঠি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে সংবাদপত্রের দোকান ‘প্রতিভা ট্রেডার্স’ খুলতেই চারটি খামের মধ্যে উড়ো চিঠি পাওয়া যায়।
খাগড়াছড়ির সংবাদপত্র এজেন্ট রতন কুমার দে বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন। সাংবাদিককে মারধর ও প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের প্রাণ নাশের হুমকির ঘটনার পর পত্রিকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে উড়ো চিঠি দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিক মহলে উদ্বেগ¦-উৎকন্ঠা আরো বেড়েছে।
খাগড়াছড়ির সংবাদপত্রের এজেন্ট রতন কুমার দে জানান, মঙ্গলবার ভোর রাতে কর্মচারী দোকার খোলার পর খামে ভড়া চারটি চিঠি পান। তাকে দেওয়া দেয়া উড়ো চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, ‘ইদানিং প্রথমআলো, সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাক, কালেরকন্ঠ, চট্টগ্রামের সুপ্রভাত বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা এলাকার সুনামধন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিথ্যাচার করছে। জনবিরোধী এসব পত্রিকা খাগড়াছড়িতে আনা ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলো। পত্র প্রাপ্তির পর যদি এসব পত্রিকা খাগড়াছড়ি আসে, তার দায়-দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে সংবাদপত্র এজেন্ট রতন কুমার দে জানান, তিনি তাৎক্ষনিভাবে বিষয়টি জানাতে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় পুলিশ সুপারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগে কে বা কারা এমন উড়ো চিঠি দিয়েছে তা সুননির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। খাগড়াছড়ি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তারেক মো: আব্দুল হান্নান জানান, একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরণের উড়ো চিঠির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পেশাজীবী সাংবাদিকরা।
খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট সংবাদপত্র ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবী রতন কুমার দে-কে উড়ো চিঠি দিয়ে হুমকির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খাগড়াছড়ির বিভিন্ন রাজনৈতিক-পেশাজীবি-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা, মাটিরাঙ্গার পৌর মেয়র মো: শামসুল হক, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক খায়রুজ্জামান কামাল, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক এড. নাসির উদ্দিন আহম্মেদ, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য, সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)-এর সভাপতি নুরুল আজম, উদীচি শিল্পী গোষ্ঠির সভাপতি দীলিপ চৌধুরী, খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সা: সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ, দীঘিনালা প্রেস ক্লাব সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রাজু, মাটিরাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি মুজিবুর রহমান ভূইয়া এবং লক্ষ্মীছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি মোবারক হোসেন পৃথক পৃথকভাবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং হুমকিদাতা দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি বিধানের দাবী জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কর্তৃক প্রথম আলো‘র আলোকচিত্র সাংবাদিক নীরব চৌধুরীকে পিটানোর ঘটনায় প্রতিবাদের কারণে হুমকি পাওয়া জেলার ৩৫ সাংবাদিক একযোগে সাধারণ ডায়রি করেছিলেন। নীরব চৌধুরী নিজেও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন। এসব ঘটনা হুমকিনামায় উল্লেখিত পত্রিকাগুলোতে ফলাও প্রচারের পাশাপাশি দৈনিক সমকাল এবং প্রথম আলোতে সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, গেল ১৮ ডিসেম্বর চেঙ্গী নদীতে বালু তোলার ছবি তুলতে গেলে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলমের অনুসারী ক্যাডার দিদারুল আলম ওরফে কসাই দিদারসহ কয়েকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে পৌরভবনে সচিবের কক্ষে নীবর চৌধুরীকে নিজ হাতেই মেয়র রফিকুল আলম মারধর করেন।
ঘটনার প্রতিবাদে ২০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মানববন্ধন কর্মসুচি পালনকালে মেয়রের অনুসারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং কর্মসূচি পালনকারী সাংবাদিকদেরকে ধরে ধরে জবাই করার হুমকি দিয়েছে। ওইদিনই সাংবাদিকরা থানায় জিডি করেন। বর্তমানে জিডি‘র ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.