বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) ১৭তম সন্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সন্মেলনে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঘোষিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষে অসহযোগ আন্দোলনসহ যে কোন কর্মসূচি সফল করার আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
এসেছে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক, ভাঙবো এবার শোষকের হাত শ্লোগান-কে সামনে রেখে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিউিট মিলায়তনে সন্মেলনে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার। পিসিপির জেলা শাখার সভাপতি বাচ্চু চাকমার সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা শাখার সভাপতি সুনির্মল দেওয়ান, পার্বত্য মহিলা সমিতির সাধারন সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা, সাবেক ছাত্রনেতা পলাশ তংচংগ্যা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক জুয়েল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দ্রা ত্রিপুরা।
দিন ব্যাপী সন্মেলনে জেলার দশ উপজেলা থেকে পিসিপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সন্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে পিসিপির সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ, সংগঠনের পরবর্তী পদক্ষেপসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, সজীব চাকমাসহ পিসিপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে পিসিপিরনেতা বাচ্চু চাকমা বলেন, জনসংহতি সমিতির ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ জানুয়ারী রাঙামাটিতে শান্তিপুর্নভাবে পিসিপি সড়ক ও অবরোধ পালনের সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ তাদের উপর হামলা-আক্রমন করেছে। যে কোন কর্মসূচি পালনের গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি অংশ হিসেবে এটা পিসিপি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। শান্তিপুর্ন সড়ক ও অবরোধ পালনের সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পিসিপির উপর হামলা-আক্রমন করেছে। তাই পিসিপিকে মোটেই দুর্বল মনে করা করবেন না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয় কোন পক্ষ ছাড়াই পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ সংবিধান বিধিসম্মত। কিন্তু চুক্তির ১৭ বছরেও আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে এখনো কার্যকর করা হয়নি। সরকার লোক দেখানোর শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে চলেছে।
রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি দান’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ শিক্ষা বিরোধী নয়। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাই নিশ্চিত করা যায়নি, সেখানে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আবারও উদ্বাস্তু করা হবে পাহাড়িদের। এ দুটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাহাড়ের মানুষের কি লাভ হবে? পাহাড়িদের অন্তরের বেদনা বুঝতে হবে। পাহাড়ীদের উদ্ধাস্তু হওয়ার মনের আবেগ উপলদ্ধিগুলো বুঝতে হবে। তাদেরকে জোর করে চাপিয়ে দেবেন না। তাদেরকে দোয়া-মায়া দিয়ে বোঝাতে হবে, তাদের কাছে টানতে হবে। এখানে চাপিয়ে দিয়ে কোন কিছুই সমাধান হবে না।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার প্রতি শ্র্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাস আসে বলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আপনি কেন পাহাড়ী মানুষের মনের বেদনা বুঝবেন কেন?। সারা বাংলার মানুষের দুঃখ বেদনা বুঝেন। পাহাড়ী মানুষের মনের দুঃখ বেদনা বুঝবেন না কে?
সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেন, পাহাড়ের মানুষের আজ নিরাপত্তা নেই। জীবনের নিরাপত্তার জন্য চট্টগ্রামে ৫০ হাজার পাহাড়ী বিভিন্ন গার্মেন্টে কাজ করছে। তারা পেটের দায়ে তারা যায়নি। আজ গন্ডুস-ফান্ডুরা মেরে ফেলবে এ ভয়ে তারা নিরাপত্তার জন্য চলে গেছে। তাই এভাবে আর বেশী দিন ধরে চলতে দেয়া যায় না।
তিনি সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সভা হয়েছে তাতে পার্বত্য ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের আলোর মুখ দেখবে বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, এবারের সভার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা রয়েছে মনে হয়েছে। প্রধামন্ত্রী এ ব্যাপারে আন্তরিক। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে আগামী সংসদ অধিবেশনে পার্বত্য ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সংশোধনী আইনটি পাস করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আইন হলে এখানকার মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু আস্থা ফিরে আসবে। তবে সরকারের ভেতর সরকার রয়েছে, সরিষার মধ্যে ভূত রয়েছে। আশংকা থাকে যে প্রধানমন্ত্রীকে যদি অন্য কেউ ভূল বুঝায় তাহলে এই আইনটি ডিপ ফ্রিজে মধ্যে থেকে যাবে। কোন আলোর মুখ দেখবে না।
তিনি বলেন, রাঙামাটির আপামর জনগন তাকে নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছেন। জনগনের প্রতিনিধি হয়ে জনগনের কথাগুলো সংসদের ভেতরে ও বাইরে বলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বলার ও বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। চন্দ্রঘোনায় সেতু ও রাঙামাটি শহরের হেচারী ঘাট এলাকায় সেতুর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বরকলে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি এসব বাস্তবায়িত হবে।
সমাজ পরিবর্তনের জন্য ছাত্র ও যুব সমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে উল্লেখ তিনি বলেন, দলকে সুশৃংখল ও সুসংগঠিত হতে হবে। উদ্দেশ্য বিহীন হলে চলবে না। সুনির্দিষ্ট আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া প্রতিটি নেতাকর্মীকে আদর্শনবান, সংযমী, দৃঢ়চেতা, সংগ্রামী ও কৌশলী হতে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.