বান্দরবানের লামায় বিস্তৃর্ণ জমিতে যেখানে শুধু তামাক ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়তনা সেখানে আজ নানান শীতকালীন সবজি চাষ চোখে পড়ছে। তার মধ্যে রয়েছে সীম, বাধাকপি, ফুলকপি, মরিচ, মূলা, বেগুন, টমেটো, ক্ষিরা, আলু, শালগম, মিষ্টিকুমড়া, বাদাম, কলই, সরিষা, ঝিংগা, সিসিংগা সহ নানান জাতের শাক সবজি।
লামা পৌর শহরসহ সবকয়টি ইউনিয়নে সর্বত্র চোখে পড়ছে শত শত একর জমিতে সীম চাষের ক্ষেত। বাংলা ভাদ্র মাস থেকে সীম চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করে চাষীরা। কার্তিক মাসে সীম গাছ মাচা বেয়ে উঠে যায়। কার্তিকের শেষ ও অগ্রহায়ন মাসের শুরুতে সীম গাছে ফুল দেখা যায়।
শীতের শুরুতে এসময় সীম গাছের বেগুনী ফুলে চারদিক ভিন্ন একটি অপরুপ আর্কষণীয় দৃশ্য ফুটে ওঠে। বেগুনী ফুলে কৃষকের মনে আগুন লাগে। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দৃঢ় থেকে আরো দৃঢ়তম হতে থাকে। ভাগ্য দেবতা এই বুঝি প্রসন্ন হয়ে তার চতুর্দর্শী হাত মেলে দিল।
লামা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম শিলেরতুয়া পাড়ার সীম চাষী মোঃ হায়দার আলী ও তার স্ত্রী মিনুয়ারা বেগম জানায়, এবছর তারা ৩ কানি জায়গায় সীম চাষ করেছে। প্রতি কানি জমিতে সীম চাষে তাদের খরচ হয়েছে ২৫-২৭ হাজার টাকা। প্রতি কেজি সীমের বর্তমান বাজার মূল্য ৩৫-৪০ টাকা। বাজার দাম যদি এখনের মত থাকে তাহলে প্রতি কানি জমিতে ৫০-৬০ হাজার টাকার সীম বিক্রি করা যাবে। ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে ৬জনের সংসার তাদের। সব ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে। তাদের সন্তানরা মানুষ হবে এটাই স্বপ্ন দেখছে কৃষক হায়দার আলী।
পার্শ্ববর্তী দরদরা ঝিরির আরেক চাষী মোঃ জহির আহমদ শুনাল ইতিমধ্যে প্রতি কানিতে সে ৩০ হাজার টাকা করে সীম বিক্রি করেছে। ২ কানি জমিতে তার সীম চাষ। প্রকৃতিক দুযোর্গ না হলে চৈত্র মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। তবে নানান রোগ বালাই প্রতিরোধে কখনও কাছে পায়নি কৃষি অফিসকে বা কোন কৃষি কর্মকর্তাকে। সরকারী সহায়তা পেলে ও বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আগামীতে আরো কৃষক তামাক চাষ বাদ দিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকবে বলে তারা মত প্রকাশ করে।
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রুস্তম আলী বলেন, এবছর লামা উপজেলায় ১২৬ হেক্টর জমিতে সীম চাষ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ইপসা ও দেশী সীম চাষ বেশী আবাদ হয়েছে। তবে অতিমাত্রায় শীতের কারণে সীমের ফুল ঝরে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সীম একটি অতি পরিচিত লতাজাতীয় বড়গাছের বীজ যা বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে ও এটি ফাবাসিয়া শ্রেণীভুক্ত। সীম মানুষ ও পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সীম পেকে শুকিয়ে যাবার আগে সীমের বীচি তোলা যায়।
তবে তা হয় সতেজ কাঁচা বা রান্না করে খাওয়ার মত। পৃথিবীতে অনেক জাতের সীম আছে। যেমন: হাইব্রিড ইপসা, ভিসিয়া, ভিগনা, সিসার, পিসাম, লাথিরাস, উন্ডিয়ান মটর, টুবারাস মটর, লেন্স, ল্যাবলাব, ফাসিউলুস, গ্লাইসিন, পসোফোকারপুস, কাজানুস, স্টিজোলোবিয়াম, সাইয়াম্পোসিস, কানাভালিয়া, ম্যাক্রোটাইরোমা, লুপিন, ইরাইথ্রিনা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.