রাঙামাটির বরকল ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ২৯টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকমা ও তংচংগ্যা ভাষাভাষি শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টংগ্যা কর্তৃক ওই সকল কমিউনিটি বিদ্যালয়ে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র যৌথ অংশীদরিত্বে পরিচালিত টংগ্যা-প্রাইমারি এডুকেশন ইন রিমোট এরিয়াস অব রাঙামাটি হিল ট্য্রাক্টস(টংগ্যা-পিইআরএআরএইচটি) প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি স্কুল সমূহে চাকমা ও তংচংগ্যা ছাত্র-ছাএীদেরকে মাতৃভাষায় পাঠদান দেয়া হয়।
জানা গেছে, বরকল উপজেলায় ২০টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ১০টির মধ্যে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাএ-ছাএীরা চাকমা ভাষার হরফে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। প্রকল্প থেকে প্রতি স্কুলে ২জন করে স্থানীয় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রত্যেককে ৪ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ে প্রকল্প সহায়তা আয় থেকে এসএমসি কর্তৃক প্রতি শিক্ষককে আরো ১ হাজার টাকা দেয়া হয়।
প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মানবাশীষ চাকমা জানান, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বরকল উপজেলায় ৩শ ৮০ ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ১শ ২৫ জন শিক্ষার্থী মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। প্রকল্প থেকে ‘চিজির পত্থম বই’নামে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বর্ণমালার একটি বই প্রকাশিত হয়। ওই বইটি শিশু শ্রেণিতে পড়িয়ে বর্ণমালাসহ শব্দ গঠন ও বিভিন্ন ছড়া শিখানো হয়। প্রথমশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এনসিটিভি বইয়ের পাশাপাশি চাকমা হরফের বইটি সপ্তাহে একদিন শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়।
তিনি আরও জানান,গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বইটি পড়ানো হচ্ছে। পরবর্তীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্যান্য ভাষাভাষিদের মাঝে এধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রযেছে বলে জানান।
জানা গেছে, টংগ্যার পরিচালিত কমিউনিটি বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকদের বেতন,শিক্ষা উপকরণ,উন্নয়ন ও অন্যান্য সহায়তা দেয়া হয়। বিলাইছড়িতে টংগ্যা কর্তৃক ১৫ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী প্রকল্পভুক্ত শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক,মাতৃভাষায় শিক্ষাদান,জেন্ডার ও মৌলিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ চলছে।
বিলাইছড়ির ডাউনপাড়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আদর তংচংগ্যা বলেন,মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় খুবই আগ্রহী হচ্ছে।
চাকমা ও তংচংগ্যা বর্ণমালার ‘চিজির পত্থম বই’ এর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ও উক্ত বিষয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষক বিজ্ঞান্তর তালুকদার বলেন,প্রকল্পভুক্ত স্কুলগুলোয় মাতৃভাষায় পাঠদান চলায় আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষার মাধ্যমে ন্যাশনাল কারিকুলামের বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বর্ণমালা ও শব্দ গঠন ইত্যাদি শিখতে পারছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্রমশঃ স্কুলমুখী হওয়ায় ড্রপ আউটের সংখ্যা কমে গেছে ।
এদিকে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় চাকমা হরফের বইটির শুভেচ্ছা বাণীতে ভাষাবিদ,শিক্ষাবিদ ও মনোবিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন,শিশুদের প্রারম্ভিক শিক্ষা মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় প্রদান করা হলে শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। তাতে আরও উল্লেখ করা হয়,মাতৃভাষা ও নিজস্ব হরফে শিক্ষার মাধ্যমে চাকমা শিশুরা স্বস্তিকর পরিবেশে শিক্ষার্জন ও মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং একই সাথে চাকমা হরফের ব্যবহার,শিখন শৈলী,চাকমা ভাষার লিখন রূপের প্রচলন,প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.