চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারী দুই মাসে কমপক্ষে ১৩ জন বিভিন্ন বয়সের আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে।
গেল বছর জানুয়ারী-ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৫৩টি ঘটনায় ৫৮ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৫৮ জন ভিকটিমের মধ্যে ২৮ জন সমতল অঞ্চলের, বাকী ৩০জন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ অধিকাংশ নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বুধবার কাপেং ফাউন্ডেশন পরিচালক নির্বাহী পল্লব চাকমা ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওর্য়াক আহ্বায়ক মিনু মারিয়া ¤্রং-এর স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রেস বার্তায় বলা হয়, আদিবাসী নারীরা জাতিগত, লিঙ্গগত, ভাষাগত, ধর্মীয়গত এবং শ্রেণীগত কারণে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ফলে দিন দিন আদিবাসী নারীদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও বাড়ছে। চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারী এই দুই মাসে কমপক্ষে ১৩ জন বিভিন্ন বয়সের আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে। গতবছর জানুয়ারী-ডিসেম্বর এর মধ্যে কমপক্ষে ৫৩টি ঘটনায় ৫৮ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৫৮ জন ভিকটিমের মধ্যে ২৮ জন সমতল অঞ্চলের, বাকী ৩০জন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের।
এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ অধিকাংশ নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আবার গ্রেপ্তার করলেও কয়েকদিনের মধ্যে আসামীরা আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে জামিন নিয়ে বের হয়ে গেছে। নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে বলে সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কাপেং ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ি কাপেং ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০০৭ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৯২টি ঘটনায় আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতনের প্রতিবেদন নথিবদ্ধ হয়েছে।
প্রেস বার্তায় আরো দাবী করা হয়,বাংলাদেশে ৫৪টির অধিক জাতিগোষ্ঠীর ৩০ লক্ষ আদিবাসীর বসবাস রয়েছে যাদের অর্ধেক অংশ নারী। আদিবাসী নারী সমাজের উপর যুগ যুগ ধরে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন চলে আসছে। বাংলাদেশের আদিবাসীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হওয়ায় আদিবাসী নারীরা আরো বেশি প্রান্তিকতার শিকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বা নীতি নির্ধারণের পর্যায়ে প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিতদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সরকারী উন্নয়ন কর্মসূচীগুলোতে আদিবাসী নারীরা অগ্রাধিকার পাননা। আদিবাসী নারী নেত্রীদের জাতীয় পর্যায়ে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবেলার অনেক পরিকল্পনা ও আইন থাকলেও তা আদিবাসী নারী বান্ধব নয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভূমি বিরোধ ও সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের কারণে সংখ্যালঘু আদিবাসী নারীরা সহিংসতার শিকার এবং অধিকাংশ ঘটনাই অ-আদিবাসী দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন, অপরাধীদের বিচার না হওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া, সমতলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশন গঠন না করা, দীর্ঘায়িত ও অসহযোগিতামূলক আইনী ব্যবস্থা ও পিতৃতান্ত্রিকতাই দায়ী।
প্রেস আরো দাবী করে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের আদিবাসী নারীর উপর সংঘটিত যৌন হয়রানি, ধর্ষণ হত্যা ও অপহরণের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হয়েছে তার কোন উদাহরণ নেই যে দোষী ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়েছে। দেশের সমতল অঞ্চলে দু-একটি মামলার আদালত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত ও শাস্তির রায় দিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ঘটনায় ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলশ্রুতিতে অপরাধীরা সম্পূর্ণভাবে দায়মুক্তি পেয়ে থাকে। ফলে সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারীরা ন্যায় ও সুবিচার থেকে বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
প্রেস বার্তায় জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামেও (সিডও ও ইউপিআর) বিভিন্ন দেশ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিসহ আদিবাসী নারী ও শিশুদের প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করতে সঠিক এবং কার্যকর কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন সময়ে সুপারিশ করেছে। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি সাধন করতে পারেনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.