রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন পরবর্তী বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশি হামলা, পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছনা এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করাসহ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান আজিজ।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাঙামাটি শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু, সদর উপজেলা ইউনিট কমান্ডার মিজানুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নির্বাচনের পরের দিন বাঘাইছড়ি হতে চবির (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ৫ ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৭ জনের জামিন ও পুলিশি রিমান্ড নামঞ্জুর করে আবারও জেলহাজতে পাঠিয়ে আগামী ৮ মার্চ পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য্য করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, গেল ১৮ ফেব্রুয়ারি বাঘাইছড়ি পৌর সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাািচত হন আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থী জাফর আলী খান। বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী ওমর আলী এবং স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন আজিজুর রহমান আজিজ। তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাচাই-বাছাই কমিটির রাঙামাটি জেলার বর্তমান সভাপতিও।
এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও পরের দিন সকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আজিজুর রহমান আজিজের বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিশ ও বিজিবি। ওই সময় আজিজুর রহমানের বাড়িতে অবস্থানরত তার ছেলের বন্ধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৭ জনকে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয় পুলিশ।
আটক চবির ছাত্রলীগকর্মীরা হলেন,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক ও আবু নাসেরের ছেলে মো. বায়েজিদ আহমেদ (২৬), মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মো. আফজাল হোসেন (২৫), আমির আলীর ছেলে নুর ইসলাম (২৩), মৃত বছির আহমেদের ছেলে তাসরিফুল হোসেন (১৯), সিরাজুল ইসলামের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৫), আবু তাহেরের ছেলে মো. ওসমান (২১) ও রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. রাকিবুর ইসলাম (২১)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্ল্যাহ বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি মতে আটক ওই চবির ছাত্রলীগকর্মীরা বহিরাগত হিসেবে আজিজুর রহমানের বাড়িতে অবস্থান করছিল। তারা নির্বাচনের পরদিন সকালে ওই প্রার্থীর বাড়ির সামনে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেয়াসহ নাশকতার চেষ্টা চালায়। এতে নির্বাচনোত্তর এলাকার স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে তাদেরকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান এবং আইনশৃংখলার অবনতি ঘটনানোর অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
তবে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এ বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেন, পুলিশের এ বক্তব্য দাহা মিথ্যা ও সম্পূর্ণ বানোয়াট। মূলত নির্বাচিত মেয়র ও তার সমর্থকদের ইন্ধনে অতি উৎসাহী হয়ে তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পুলিশ। তিনি নির্বাচনের ফল যা হয়েছে মেনে নিয়েেিলন। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা পক্ষের সরকারের আমলে কেবল নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করার অপরাধে তাকে এবং আমার পরিবার ও সমর্থকদের ওপর জঘণ্যতম অমানবিক হিংসাত্মক আক্রমণ চালিয়ে নির্মম অত্যাচার ও হয়রানি চালানো হচ্ছে। বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ তার বাসায় ঢুকে নির্লজ্জভাবে হামলা ও পরিবারের নারী-পুরুষদের লাঞ্ছিত করবে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তা কল্পনাও করেনি। অতি উৎসাহী হয়ে পুলিশ প্রশাসন অর্থলোভে এবং ব্যক্তিস্বার্থে নির্বাচনে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও ক্ষমতাধর দলীয় ক্যাডারদের টোকেনে একজনকে ৫-১০টি ব্যালট পেপার সরবরাহ দিয়ে কারচুপির সুযোগ করে দেবে তা ভাবতেও পারিনি বলে তার অভিযোগ।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, নির্বাচনের দিন বেলা ১১টার পর ক্ষমতাসীন দলীয় ক্যাডারদের টোকেনের মাধ্যমে ৫-১০টি করে ব্যালট দেয়া হয়। ওই সময় তার এজেন্টদের নানা হুমকি দিয়ে বাকরুদ্ধ করে রাখা হয়। নৌকা প্রার্থীর কেন্দ্রে ৯৫ ভাগ ভোট পড়া কোনোতেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। এটিই কারচুপির আসল প্রমাণ। অথচ অন্য কেন্দ্রগুলোতে ভোট পড়েছে ৬৫ ভাগ। নির্বাচনের পরদিন সাংবাদিক ও উর্ধতন কর্মকর্তারা এলাকা ত্যাগ করলে বাঘাইছড়ি থানার ওসি আবুল কালাম দলবল নিয়ে আমার বাসায় হানা দেয়।
ওই ওসি একজন জামায়াতের লোক। প্রমোশনের লোভে এমনটা আচরণ করেছেন তিনি। নির্বাচনের পরদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র সাজেক ঘুরে এসে তার ছেলের বন্ধু হিসেবে বাড়িতে আসে। ১০টার দিকে বিজিবির ক্যান্টিনে নাস্তা করতে গেলে পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের ওপর চড়াও হয়। পরে পুলিশ ও বিজিবি তার বাসায় হানা দিয়ে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.