মুহাম্মদ আবুল হাশেম। চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ফকিরাঘোনা গ্রামের মরহুম সিদ্দিক আহমেদ ও নুরজাহানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান। লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী মুহাম্মদ আবুল হাশেম ১৯৯৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ ও এসএসসি, ১৯৯৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এইচএসসি ও ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইংরেজী সাহিত্য’ বিষয় নিয়ে লেখা-পড়া শেষ করে ২০০৮ সালে ২৭-তম বিসিএস ক্যাডার হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী মেজিস্ট্রেট হিসেবে প্রথম যোগদান করেন।
এরপর সততার সহিত দায়িত্ব ও কর্তব্যবান হিসেবে বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলার কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন পরবর্তী ২০১৭ সালে ২০ এপ্রিল ১৯-তম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পানছড়ি উপজেলায় যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি উপজেলারবাসীর কাছে জনপ্রিয় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। অতীতের ১৮জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইতোপূর্বে সে রকম জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করতে পারেনি। সম্প্রতি তিনি খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলী হয়েছেন। বিদায় প্রাক্কালে উপজেলার এ জনপ্রিয় নির্বাহী কর্মকতার সাথে উপজেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শিক্ষা, পর্ষটন, উন্নয়ন, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন পানছড়ি উপজেলার প্রেসক্লাবের সভাপতি সংবাদকর্মী নূতন ধন চাকমা।
তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন-উপজেলার পাহাড়ী-বাঙালীর সম্প্রীতি সুদৃঢ়করণসহ পর্যটনের নতুন স্পট “মায়াবীনি’’ ও “মায়াকানন’’ নামে দুটি অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট সৃষ্টি করে উপজেলার বিনোদন বঞ্চিত জনসাধারনকে বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে উপজেলায় সূচিত হয়েছে অর্থনীতির নতুন যুগ। এর ফলে পানছড়ি উপজেলাটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষনীয় বিনোদন ঠিকানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর এ কাজগুলো সফলভাবে করতে পেরেছি উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু সর্বোত্তম চাকমা ও উপজেলার প্যানেল চেয়ারম্যান জনাব লোকমান হোসেননহ উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একান্ত সহযোগিতার ফলে। তিনি কয়েকদিন পরে যোগ দেবেন খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে।
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাটি অনগ্রসর একটি উপজেলা।এ উপজেলার শিক্ষার হার মাত্র ৪৬ শতাংশ। আর শিক্ষার গুণগত মানও কম। এব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- আমি এ উপজেলায় যোগদান করার পর উপজেলার শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষার হার বাড়ানো নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্টান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি, এলাকার গুণীজন, জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে এবং বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সমাধানের লক্ষে বহুমূখী পদক্ষেপ নেওযা হয়েছে। ২০১৭ইং সালে উপজেলার ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে মত বিনিময় করে উপজেলার প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষাথী ৫জন ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ৫জন নিয়ে পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাশের পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশেষ ক্লাশে পাঠদান করেন ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও হিসাব বিজ্ঞানের অভিজ্ঞ শিক্ষকগণ। এসব শিক্ষকদেরকে প্রতিটা ক্লাশের জন্য ৫০০টাকা হারে সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন উপজেলা পর্যায়ে ৫ম শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণি ও ৮ম শ্রেণি থেকে ১০ ম শ্রেণি শিক্ষার্থীদের জন্য বেসিক ও সাধারণ জ্ঞান অলিম্পিয়াড-২০১৭ আয়োজন করেছি এবং এতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি।
নতুন দু’টি পর্যটন স্পট মায়াবিনী ও মায়াকানন গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি বলেন,এ উপজেলার কোনো ধরনের পর্যটন স্পট না থাকায় যুগ যুগ ধরে বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছিল উপজেলাবাসী। তাই আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা মিলে উপজেলার কংচাইরী পাড়ার একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তার মাছ, হাঁস, মুরগী চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষে তৈরী করা লেককে পর্যটন স্পট “মায়াবীনি” করার উদ্যোগ নিয়েছি।
গত ৭ নভেম্বর ১৭ইং এ খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক রাশেদুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক সহধর্মীনি কানিছ ফাতেমা স্বর্ণা “মায়াবিনী” পর্যটন কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে পর্যটকদের কাছে পর্যটন স্পট হিসেবে “মায়াবিনী” ব্যাপক আকর্ষনীয় হয়ে উঠে।
উপজেলা থেকে পর্যটন স্পট “মায়াবিনী” প্রায় ১৩/১৪ কিলো দূরে। তাই সবার পক্ষে মায়াবনিীতে যাওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। তাই পূনরায় উপজেলার পরিষদ থেকে প্রায় ২০০গজ পশ্চিমে আকর্ষনীয় ও মনোমুগ্ধকর নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি পর্যটন স্পট ‘মায়া কানন’কে। উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়াম্যান মোঃ লোকমান হোসেনের একান্ত সহযোগিতায় এ পর্যটন স্পটটি গড়ে উঠেছে। এটি উপজেলা সদরের একমাত্র পর্যটন স্পট। বিনোদনের জন্য প্রতিদিন শত শত লোক এ পর্যটন স্পটে আসে। এ পর্যটন স্পটটি জেলার প্রধান আকর্যনীয় পর্যটন স্পট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত ২৭ আগষ্ট বিকেল ৫টায় এ পর্যটন স্পটের শুভ উদ্বোধন করেন উপজাতীয় ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান ও সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। উপজেলা পরিষদের ক্যাম্পাসে নিবিড় নিরাপত্তাবেস্টিত এ বিনোদন কেন্দ্রে স্থানীয় ও বাইরের পর্যটকগণ যাতে রাত অব্দি পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে পারেন সে উদ্দেশ্যে এ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এটি জেলার সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা কামনা করেছেন।
উপজেলা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হয়। তাই খেলাধুলায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আনার চেষ্ঠা করেছি। এতে ব্যাপক সফলতাও পেয়েছি।
সদ্যবিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম গুরুত্ব দিয়ে বলেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে “পার্বত্য শান্তিচুক্তি” ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিটি জনপদে সবকটি জনগোষ্ঠীর জীবনমান, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা সঞ্চার হয়েছে। এটি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অসামান্য নেতৃত্বের সুফল। তাই এ অনগ্রসর পশ্চাৎপদ এলাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নসহ নারীর ক্ষমতায়নের ফলে মানুষের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত কারার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা যথাযথ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পুরণে আমি এ কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছি। আর এজন্য স্থানীয় সাংসদ বাবু কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলামের ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছি। তাই উপজেলার সেবা নিতে আসা জনসাধারনের জন্য “মায়াকুঞ্জ” নামক গোলঘর তৈরী করে দিতে পেরেছি। এর ফলে উপজেলার সেবা নিতে আসা জনসাধারন ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যেখানে গিয়েছি মানুষ আমাকে অত্যন্ত সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে।পেয়েছি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপক সহযোগিতা। তাই মণপ্রাণ উজাড় করে সকলের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে পেরেছি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.