খাগড়াছড়িতে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর করা মামলায় জড়িত কর্মকর্তাদের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অতংকে দুর্নীতিবাজদের এখন ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গেল বুধবার খাগড়াছড়ি সদর থানায় দুদক’র রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাদী হয়েস্বাস্থ্য বিভাগের ফার্মাসিস্ট নিয়োগে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও প্রতারনার অভিযোগে সাবেক খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন নারায়ন চন্দ্র দাশ ও রাঙামাটির বর্তমান সিভিল সার্জন ডা: শহীদ তালুকদারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সদর থানার মামলা নং-১২ এর প্রেক্ষিতে ওই দিন বিকালে দীঘিনালা থেকে বাবুছড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফার্মাসিস্ট পদে কর্মরত উদয়ন চাকমাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ মামলায় অপর আসামীরা এখনও পলাতক রয়েছেন।
সরেজিমে গিয়ে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কার্যালয়ের অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা অফিসে প্রবেশে যেমন কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তেমনি কেউ প্রবেশ করলে তার দিকে ফেল ফেল করে দু‘চোখে চেয়ে থাকে অসহায়ের মতো। পরিচয় পাওয়ার পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কথা শুরু করেন তারা। গণমাধ্যম কর্মীদেরও বিশ্বাস করছেন না অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা। সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি সড়ক জনপথ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য জেলা পরিষদ, বিআরটিএ, গণপুর্ত, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, বন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস, ভূমি অফিস, পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ, শিক্ষা অফিস, খাদ্য অফিসসহ কয়েকটি সরকারি অফিস ঘুরে কর্মকর্তাদের মাঝে দুদক আতঙ্কের কথা জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এর আগে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে চেক জালিয়াতির মামলায় অমলেন্দু চাকমা নামে এক ঠিকাদারকে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন। জেলা শহরের পানখাইয়াপাড়া এলাকা থেকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
সূত্র মতে,একই বছরের ১১মে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউছুফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মাটিরাঙা থানায় এই মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক জাহিদ সালাম। পৌর এলাকায় ভুয়া ড্রেনেজ প্রকল্প দেখিয়ে সাবেক মেয়র আবু ইউছুফ চৌধুরী, কার্য-সহকারী আনোয়ার হোসেন এবং সচিব অনিল চন্দ্র ত্রিপুরা সর্বমোট তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি দীর্ঘদিন তদন্ত করার পর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে দুদক কর্মকর্তা এই মামলা করেছেন বলে জানা যায়।
সূত্র আরো জানায়, এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলার মাটিরাঙা উপজেলায় দুটি ব্রিজের নির্মঅণ কাজে পে-অর্ডার জালিয়াতির অভিযোগ এনে জেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, তৎসময়ের উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক করুনা বিকাশ ও উদয়ন কর দেওয়ানের বিরুদ্ধে মাটিরাঙায় থানায় মামলা দায়ের করেন দুদক, রাঙামাটির সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সফিকুর রহমান ভূইয়া। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় পরস্পর যোগসাজশে পে-অর্ডারে ৯২হাজার টাকার স্থলে ৯২০টাকা ও ১লক্ষ ৬০হাজার টাকার স্থলে ১৬হাজার টাকার পে-অর্ডার দাখিল করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয় অভিযুক্তরা।
এদিকে,কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, দুদক খাগড়াছড়িতে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মিথ্যা তথ্য প্রদান ও তথ্য গোপন এবং প্রতারনায় যে মামলা করেছে সে মামলার পর হতে যেমনি আতংক বিরাজ করছে তেমনি কে কখন আটকের তালিকায় পড়ছে তাও রীতিমত ভাবনায় ফেলেছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় কয়েকজন জানান, আটক ও মামলার ঘটনার পর হতে খাগড়াছড়িতে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটু হলেও সাবধান হবে। স্থানীয়রা আশাবাদী, সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন হতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনিয়ম দুর্নীতি রুখতে দুদক অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশনের রাঙামাটির উপ-পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ভূঁইয়া জানান, জামানতের তিন লাখ পাঁচ হাজার টাকার একটি ভুয়া চেকের মাধ্যমে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সেতু নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ হাসিল করে নেন ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমা। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। ওই বছরের পরের মাসে ৭মার্চ খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। খাগড়াছড়ড়ি দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও জেলা প্রশাসন এ গণশুনানির আয়োজন করে। খাগড়াছড়িতে সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয় এই আয়োজনে।
শুনানিতে বক্তারা জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল হকের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। এর আগে ২০১৬ সালের ১৬মে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্নসাতের অভিযোগে খাগড়াছড়ি অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক করুনা বিকাশ চাকমাকে দুদকের উপ-পরিচালক সফিকুর রহমানের নেতৃত্বে আটকের ঘটনা বেশ সাড়া ফেলে পুরো জেলায়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.