খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজ বিহারের শতবর্ষ পূর্তি ও পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিন ব্যাপী বৌদ্ধ মেলা।
এ উপলক্ষে বুধবার সকালে উপজেলার লারমা স্কোয়ার থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। দুপুরে দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজিত বিশাল ধর্মীয় সভায় শান্তির পায়রা উড়িয়ে তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এদিকে মেলাকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় মেতে উঠেছে উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
জানা যায়, ভগবান গৌতম বুদ্ধের মানবতাবাদী বাণী সমূহ প্রচারের মাধ্যমে অহিংস সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯১৬ খ্রিষ্টাদ্ধে তৎকালীন চাকমা রাজা ভূবন মোহন রায় প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী এই বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজ বিহার। অপরদিকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী অনাথ, অসহায়, ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন রাজ বিহারাধ্যক্ষ পরম শ্রদ্ধেয় ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির প্রতিষ্ঠা করেন পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম নামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজ বিহার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতি বছর ফালগুন মাসে প্রাচীন ঐতিহ্য হিসাবে বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হতো বৌদ্ধ মেলা। কিন্তু নানান প্রতিকূলতার কারণে দীর্ঘদিন ঐহিত্যবাহী এই বৌদ্ধমেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর রাজ বিহারের শতবর্ষ পূর্তি ও অনাথ আশ্রমের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বৌদ্ধ মেলাকে ঘিরে পুরো এলাকা জুড়ে বইছে উৎসব মুখর পরিবেশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘাইছড়িমুখ চাকমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিচালক আনন্দ মোহন চাকমা জানান, আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ দুটি প্রতিষ্ঠানের গৌরবদীপ্ত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশাল এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ ধরনের আয়োজন ধর্মীয় নির্দেশনা পালনের প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির পাশাপাশি নিজেদের সংস্কৃতির স্বকীয়তাকে বিকশিত করবে বলে জানান তিনি।
মিলনপুর গ্রামের ত্রিদিপ দেওয়ান, মধ্য বোয়ালখালীর সন্তুষ চাকমা, কাঠালতলীর যতীন বিকাশ চাকমা, আশ্রম এলাকার লোচন দেওয়ান ও হাচিনসনপুরের বিশ্ব কল্যাণ চাকমা জানান, পার্বত্য জনগোষ্ঠীর অহংকার চাকমা সার্কেলের কিংবদন্তী রাজা ভূবন মোহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী রাজ বিহারের শতবর্ষপূর্তি ও অনাথ আশ্রমের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবমুখর পরিবেশে পালনের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়েছি।
শতবর্ষ পূর্তি ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক শতরুপা চাকমা জানান, সকাল ৮ টায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচী শুরু হবে। দুপুর ১ টায় দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজিত বিশেষ প্রার্থনা ও ধর্মীয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচীতে বুদ্ধপূজা, সিবলী পূজা ও বোধিবৃক্ষের আসনে বুদ্ধমূর্তি স্থাপনসহ নানা প্রকার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি বৌদ্ধ মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শতবর্ষ পূর্তিকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন ও বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাজ বিহারের চারপাশ। বৌদ্ধ মেলাকে ঘিরে হরেক রকম রকমারি বাহারী ডিজাইনের পন্যসামগ্রী নিয়ে বসেছে অসংখ্য দোকানি। সবকিছু মিলে শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজ বিহার ফিরে পেয়েছে তার হারানো প্রাচীন ঐতিহ্য রাজকীয়তা।
বিহারাধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাস্থবির জানান, তিন দিনব্যাপী কর্মসূচীতে প্রতিদিন ধর্মপ্রান দায়ক দায়িকাসহ লাখো মানুষের সমাগমের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। পাশাপাশি কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কর্মসূচী চলাকালীন পারষ্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস নিয়ে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়াবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.