এবার হাল্কা বাতাসেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার সাবস্টেশনের ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের দুটি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল পুড়ে গিয়ে মাটিতে ছিড়ে পড়েছে। এতে অল্পের জন্য তিন মটরসাইকেল আরোহী প্রাণে রক্ষা পেলেও প্রায় ছয় ঘন্টা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে পড়ে উপজেলার সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রাহক। সোমার সকাল পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, সোমবার সকাল পৌনে ১১ দিকে কাউখালী উপজেলায় হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। এসময় উপজেলার ছিদ্দিক আকবর দাখিল মাদরাসার সামনে থাকা সাবস্টেশনের ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের দুটি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল পুড়ে গিয়ে মাটিতে ছিড়ে পড়েছে। এতে মুর্হুতের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে পথচারী ও এলাকাবাসীদের মধ্যে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচলও। ঘটনার পর দুপুরে কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌচামং চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া আখতার ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শহীদুল আলম(৪০) ও মোঃ হযরত (৩২) অভিযোগ কওে বলেন ক্যাবল ছিড়ে পড়ার সময় অল্পের জন্য তিন মোটরসাইকেল আরোহি প্রাণে বেঁচে গেছেন। প্রতিদিনই সড়ক দিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারী যাতায়াত কওে থাকেন। কিন্তু গত দুই মাসে তিন দফায় এ ধরণের ঘটনায় এ লাইনের নিচে দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় লোকজন আতংকে থাকে। গৃহবধু সাহানা আক্তারের (৩৭) জানান, বিদ্যুতের আলোর চাইতে আতংক ছড়াচ্ছে বেশি সেই লাইন আমরা চাই না।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ,সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে লাইন সম্প্রসারণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। একই সাথে দ্রুত এসব নিম্নমানের ক্যাবল পরিবর্তন করে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানারও তারা দাবি করেছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কাউখালীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রায় সোয়া ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ চলছে সাবষ্টেশনটির। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরমান এন্টারপ্রাইজ তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দে প্রায় সাত কিলোমিটার ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের লাইন সম্প্রসারণ কাজ পায়। কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ সরকার প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী হলেও কাজটি সাব ঠিকাদার রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরমান এন্টারপ্রাইজ’র সত্ত্বাধিকারী এরশাদ সরকার জানান,বিদ্যুৎ বিভাগ মালামাল সরবরাহ করেছে।আমরা শুধু কাজ করছি। ক্যাবল নিম্নামানের হলে কর্তৃপক্ষ বুঝবে। আমাদের কী ?
সূত্র মতে, প্রায় ৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাউখালীতে বর্তমানে লোড রয়েছে আড়াই মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রায় সাত মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এ সাবষ্টেশন থেকে শুধুমাত্র উপজেলা সদরে আধা মেগাওয়াটের লোড দেওয়াতেই ক্যাবল পুড়ে গিয়ে মাটিতে ছিঁড়ে পড়ছে বার বার।
সূত্র আরও জানায়, গত ২০ মার্চ সকালে উপজেলা সদরের অদূরেই কাউখালী-রানীহাট সড়কের বেতছড়ি পাইন বাগান এলাকায় বিদ্যুতের ক্যাবল পুড়ে গিয়ে গলে আজিমের চা দোকানের উপরে আছড়ে পড়ে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা যান আজিমে স্ত্রী রহিমা বেগম (৪৫) ও তার মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতি মোঃ অনিক (৬)। চোখের সামনেই বিদ্যুতের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে ছটফট করার দৃশ্য এখনো ভুলতে পারেননি এলাকাবাসী। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আধঘন্টার গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতেই কাউখালী-রাণীরহাট সড়কে সেগুন বাগান এলাকায় আকস্মিকভাবে সঞ্চালন লাইনটির দুটি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল (প্লাস্টিকের কভার লাগানো তার) পুড়ে গিয়ে গলে মাটিতে ছিড়ে পড়ে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও প্রায় আট ঘন্টা পরে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়।
কাউখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী হাসির উদ্দিন মিয়া জানান,প্রায় ৩০ বছর ধরে পুরনো বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উপর প্রায় প্রতিদিনই গাছ-বাঁশ ভেঙে পড়লেও একবারও ক্যাবল ছিঁড়ে পড়েনি। আর হালকা বাতাসেই নতুন লাইন ছিঁড়ে পড়ছে বার বার। তার মতে, অত্যন্ত নিম্নমানের এ ক্যাবল দিয়ে ১১ হাজার কিলোভোল্ট লাইন কোনভাবে চালানো গেলেও এটি দিয়ে ৩৩ হাজার কিলোভোল্ট লাইন টানিয়ে কাউখালীর জন্য একটা মরণফাঁদ তৈরি করা হচ্ছে। এখনো নতুন এ সঞালন লাইনের কাজ বুঝে নেননি দাবী করে তিনি বলেন, বার বার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন সুরাহা পাওয়া যাচ্ছে না।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আখতার জানান,এটি আতংকজনক, উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দ্রুত জানানো হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.