সাফ জয়ী পাঁচ নারী ফুটবলারদের বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটিবাসী। পাহাড়ে এই পাচঁ কন্যাকে কাছে পেয়ে আনন্দে ভাসছে পাহাড়বাসী।
বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে সাফ শিরোপা জয়ী ‘পাহাড় কন্যা’ ঋতুপর্না চাকমা, রুপনা চাকমা, মনিকা চাকমা এবং জমজ আনাই ও আনুচিং মগিনীকে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছাদ খোলা গাড়ীতে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে রাঙামাটি মারী ষ্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর এই পাঁচ পাহাড় কণ্যাকে সংবর্ধিত করা হয়। এতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তারুকদার এমপি। এসয় বক্তব্যে দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংশুইপ্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এছাড়া সংবর্ধিত ফুটবলার থেকে অনুভুতির বক্তব্যে দেন সাফজয়ী পাহাড় কণ্যা ঋতুপূর্ণা চাকমা। অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ,রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীসহ জেলার সামরিক ও বেসামরিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়াও কয়েক হাজার ক্রীড়ামোদি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে পাচঁ পাহাড়ী কন্যাকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে প্রতিজনকে দুই লাখ টাকা, বিদ্যালয়ের সাবেক কোচ বীর সেন চাকমা ও শান্তিমনি চাকমাকে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিজনকে ৫০ হাজার টাকা ও কোচদের ২৫ হাজার করে দেওয়া হয়। এছাড়াও এই পাঁচ ফুটবলাদের জন্য রাঙামাটি বিজিবি, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, রাঙামাটি পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্রেস ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রি দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে পাহাড়ের পাঁচ নারীর ফুটবলারের খেলার জীবনে প্রথম হাতের খড়ি ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌছার আগে ঘাগড়া প্রবেশ মূখে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পরে আনন্দ উল্লাস আতশ বাজি ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে ঘাগড়া বাজার থেকে স্কুলে নিয়ে আসা হয় হয়। সেখানে ফুটবলাদের নিয়ে কেট কাটেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সবাইকে মিটিষ্টমুখ করা হয়। এসময় বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীরা ৫ফুটবলারদের কাছে পেয়ে আনন্দে মেতে উঠেন। এ সময় ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চন্দ্র দেওয়ান, কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ পারভেজ, ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার রাতে তারা চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঋতুপূর্না চাকমার গ্রামের বাড়ী মগাছড়িতে পৌছান। সেখানেও শত শত গ্রামবাসী আতজবাজি আর মশাল জ্বালিয়ে বরণ করে নেন তাদের। এসময় ঘাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, এ পর্যন্ত খেলোয়ারদের পাশে জেলা প্রশাসনকে পেয়েছি। তবে এখনও পর্যন্ত ফুটবল ফেডারেশন থেকে সে ধরনের কোনো সহযোগিতা পায়নি। সহযোগিতা না পেলেও শান্তি মনি চাকমা ও বীরসেন চাকমাসহ আমরা সকলে তাদের প্রতিভাকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। শুধু বীরসেন চাকমা ও শান্তি মনি চাকমা নন। ৫ তারকাদের গড়ে তোলার পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে।’
ফুটবলার ঋতুপূর্না চাকমা তার অনুভূতি বক্তব্যে বলেন,‘বঙ্গমাতা খেলায় বিজয়ের মাধ্যেমে আমাদের বিজয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে। বীরসেন জীতুর মাধ্যেমে আমরা এ খেলায় আসতে পেরেছি। আর আমাদের তেরি করেছেন প্রশিক্ষক শান্তি মনি স্যার। শুধু তারা নন চন্দ্রা দেওয়ান ম্যাডাম ও অন্যান্যদের নাম বললে শেষ করা যাবে না। তবে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে ফুটবলার তৈরি করতে হলে সরকারে পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে হবে। না হলে তা কখনও সম্ভব নয়।’
তিনি শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য দাবী জানিয়ে আরো বলেন, তার প্রিয় বিদ্যালয় ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কারণে আজ তিনি বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দলের একজন হয়ে খেলছেন। ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় যদি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা না করতো তাহলে তার বঙ্গমাতা ফুটবল খেলার পরে হারিয়ে যেতাম। ২০১১ বঙ্গমাতা চ্যাম্পিয়নশিফ হয়েছিলাম। সেই ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় এখনও জাতীয়করণ হয়নি। তিনি ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট কাছে দাবী জানান।
প্রধান অতিতি বক্তব্যে খাদ্য সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন,‘খেলার প্রতি যদি পরিশ্রম, নিষ্ঠা, আশ্বাস,ভালোবাসা যদি থাকে তখন অনেক উপরে উঠা যায়। তার প্রমাণ আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাঁচ বীরকন্যা। তাদের পরিবারে অস্বচ্ছলতা নানাবিধ সামজিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তে¡ও তারা এগিয়ে চলেছে এবং এগিয়ে যাবে। আজকে আমরা বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হবে তা কখনও ভাবিনি। আমরা দেখি মহিলা ফুটবলকে অনেক উপেক্ষা করা হয়। যেখানে পুরুষ খেলোয়াররা তিন চার লক্ষ পায় সেখানে কিন্তু মহিলা ফুটবলারদের মাত্র ১২ হাজার টাকা। এর আগে নারীরা ফুটবল খেললে অনেকে নানান কথা বলতো। কিন্তু এখন তা আর বলেন না। তেমনি একদিন মহিলা ফুটবলারদের বেতনও বাড়বে।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় হচ্ছে নারী খেলোয়াড় সৃষ্টির কারিগর। শত প্রতিকুলতার মাঝে থেকে রাঙামাটির ক্ষুদে খেলোয়াড়রদের খুজে বের করে নিয়মিত কাউন্সিলিং ও প্র্যাকটিসের মাধ্যমে দেশের জন্য খেলোয়াড় তৈরী করছে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের পাহাড়ে ৫ নারী ফুটবলার আনাই, আনুছিং, রূপনা, ঋতুপর্ণা ও মনিকা বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে বিভিন্ন স্কুলের হয়ে খেলে উঠে আসে। তাদেরকে নিবীড় মমতায় গড়ে তোলেন মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীর সেন চাকমা। পরবর্তীতে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে গড়ে তোলে শান্তি মনি চাকমা। আজ তারা দেশের গর্ব।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.