ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ন্যুনতম কর্মসূচীর ভিক্তিতে দুই পার্টির নেতৃত্বে যৌথ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির প্রতি প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শুধু মুখের কথায় সরকারের চিড়ে ভিজবে না এবং সরকারের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র চুক্তি বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ করে আরাম আয়েশে বসে থাকলে হবে না। ১৯৯৭ সালের চুক্তি যেমন তৎকালীন পিসিপি-পিজিপি ও জেএসএস-এর যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত গণআন্দোলনের ফসল, তেমনি জনগণের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তোলা না হলে কখনই এই চুক্তি বাস্তবায়ন কিংবা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’
শনিবার ইউপিডিএফের ২৩ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমার স্বাকক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটির প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ফ্যাসিস্ট দমনপীড়ন বন্ধ করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান তিনি বলেন, একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী এই সরকারের দেশ শাসন করার কোন বৈধ অধিকার নেই। তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীকে অবৈধ সরকারের অবৈধ কার্যকলাপে এবং বিশেষত মানবাধিকার লঙ্ঘনে শরীক না হওয়ার পরামর্শ দেন
বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ফ্যাসিস্ট নিপীড়নের স্টীম রোলার চালিয়ে সংখ্যালঘু পাহাড়ি জাতিগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়; গ্রামে গ্রামে তল্লাশীর নামে লুটপাট, হয়রানি, নির্যাতন; বিনা কারণে ইউপিডিএফ সদস্য, সমর্থক ও সাধারণ নিরীহ লোকজনকে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রাখা এবং তথাকথিত পর্যটন ও হোটেল-মোটেল নির্মাণের নামে পাহাড়িদের জমি বেদখল ও উচ্ছেদ ইত্যাদির কারণে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
অপরদিকে এসব চরম ও সীমাহীন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ন্যুনতম অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রসিত খীসা বলেন, ‘সর্বত্র আজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে, জনগণের মিছিল সমাবেশ দূরের কথা, সরকারের বাহিনীগুলো সামান্য পোস্টার, দেয়াল-লিখনও সহ্য করছে না। ইউপিডিএফের সকল অফিস জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অতীতে যেমন ব্যাপক দমনপীড়ন চালিয়ে কিংবা মুখোশ বাহিনী ও বোরকা পার্টিসহ নান ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লেলিয়ে দিয়েও জনগণের আন্দোলনকে ধ্বংস করা যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না।’
বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা ৯ দফা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন ও বিভিন্ন স্থানে নির্মিত সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করতে হবে, ঘরবাড়ীতে তল্লাশীর নামে নিরীহ জনগণের অর্থ-সম্পদ লুট, হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা, ইউপিডিএফ সদস্য, সমর্থক ও সাধারণ নিরীহ জনগণকে বিনা কারণে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় জেলে আটক বন্ধ করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা ও জারী করা হুলিয়া তুলে নিতে হবে এবং আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ জেলে বন্দী ইউপিডিএফ-এর নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। আদালত থেকে জামিন লাভের পর জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। ঢাকায় নিখোঁজ হওয়া ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধান দিতে হবে। তথাকথিত উন্নয়ন, পর্যটন, হোটেল-মোটেল-রিজোর্ট এবং সামরিক স্থাপনা নির্মাণের নামে পাহাড়িদের জমি বেদখল ও পাহাড়ি উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, বেদখলকৃত জমি ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। রামগড়, পানছড়ি ও দীঘিনালাসহ বিভিন্ন এলাকায় বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর রাস্তাঘাট ও সাজেকে বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করতে হবে এবং ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থীদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন করতে হবে। দীঘিনালায় বিজিবি কর্তৃক উৎখাত হওয়া ২১ পরিবার পাহাড়িকে তাদের নিজ জমিতে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করতে হবে। তথাকথিত মগ পার্টিসহ রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনীগুলো ভেঙে দিতে হবে এবং এর সদস্যদের গ্রেফতার পূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাদের মদদদাতা গডফাদারদেরও আইন মোতাবেক শাস্তি দিতে হবে। খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরে ৭ খুন ও মিঠুন চাকমা হত্যাসহ ইউপিডিএফ সদস্য ও সমর্থকদের খুনের বিচার করতে হবে এবং ধর্ষণসহ নারীর উপর যৌন সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং এ যাবত সংঘটিত সকল ধর্ষণ ঘটনার দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
--প্রেস বিজ্ঞপ্তি।